এলপিজি আমদানি

দেশে উৎপাদিত কিংবা আমদানি করা নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চার মাস ধরে আমদানি করা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে যে দাম নির্ধারণ করে আসছে, তা জরুরি ছিল বলে মনে করি।

বর্তমানে বেসরকারিভাবে এলপিজি আমদানি হয়ে থাকে এবং এর সঙ্গে ছোট-বড় ২৭টি কোম্পানি জড়িত। তারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে এলপিজি আমদানি করে থাকে। এলপিজি আমদানিকারকদের সমিতি লোয়ার প্রথমে বিইআরসির উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও রহস্যজনক কারণে সমন্বয় কমিটির বৈঠকে আসছে না। অথচ গত এপ্রিল থেকে প্রতি মাসেই বিইআরসি দাম পুনর্নির্ধারণের নামে কয়েক দফা এলপিজির দাম বাড়িয়ে চলেছে। সর্বশেষ ২৯ জুলাই এলপিজির দাম ১২ কেজির সিলিন্ডারপ্রতি ১০২ টাকা বাড়িয়ে ৯৯৩ টাকা পুনর্নির্ধারণ করে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। আগেরবার সিলিন্ডারপ্রতি দাম বাড়ানো হয়েছিল ৪৯ টাকা।

উদ্বেগের বিষয় হলো আমদানিকারকেরা বিইআরসির সিদ্ধান্ত মানছেন না এবং বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করছেন। তাঁদের দাবি, এলপিজি আমদানি ও পরিবহনে খরচ বেশি পড়ে। আবার আমদানি করা এলপিজির দেশভেদেও দামের কিছুটা তারতম্য আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ১১ লাখ টনের মতো এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিবছর এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে গড়ে ৩৫ শতাংশ হারে। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় আমদানির পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। নতুন করে কোনো বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে সরকারি উদ্যোগে এলপিজি আমদানির উদ্যোগকে ভিন্নভাবে দেখার দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পরিকল্পনা হলো মাতারবাড়ীতে বিশাল টার্মিনাল নির্মাণ করে বড় জাহাজে এলপিজি আমদানি করার। এতে খরচ কমবে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দুই থেকে তিন হাজার টনের জাহাজে এলপিজি আনতে প্রতি টনে খরচ পড়ে ১০০ থেকে ১১০ ডলার। অন্যদিকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টনের জাহাজে আমদানি করলে খরচ পড়বে ৬৫ থেকে ৭০ ডলার। অর্থাৎ প্রতি টনে ৩৫ থেকে ৪০ ডলার সাশ্রয় হবে। সে ক্ষেত্রে দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমবে প্রায় ৩০০ টাকা।

তবে সরকারের এলপিজি আমদানির উদ্যোগ যেন কোনোভাবেই গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল না হয়। টার্মিনাল স্থাপন করতে কমপক্ষে তিন–চার বছর সময় লাগবে। সে পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগের এলপিজি আমদানি বন্ধ থাকতে পারে না। যে প্রক্রিয়ায় সরকার ডিজেল ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে, সেই প্রক্রিয়ায় এলপিজি আমদানি করা যেতে পারে। এলপিজি আমদানিতে খরচ কমলে ব্যবসায়ীদেরও আপত্তি থাকার কথা নয়।

বেসরকারি আমদানিকারকেরা যে বিষয়টি ভালোভাবে নেবেন না, তা তাঁদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া থেকেই উপলব্ধি করা যায়। এলপিজি আমদানি বা ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নেই বলে তাঁরা যে যুক্তি দেখাচ্ছেন, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। দেশে এলপিজি আমদানির আগপর্যন্ত এ বিষয়ে তাঁদেরও অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা মনে করি, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এলপিজি আমদানি হলে যেমন উভয় পক্ষের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে, তেমনি ভোক্তারাও লাভবান হবেন। সরকারের পরিকল্পনা ও কাজে ভোক্তার স্বার্থ অগ্রাধিকার পাক।