কবে মিলবে করোনার টিকা

সম্পাদকীয়

ধরে নেওয়া হয়েছিল, জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসবে। টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, সেটাই ছিল এই প্রত্যাশার ভিত্তি। কিন্তু ভারতের চাহিদা মিটিয়ে টিকা রপ্তানির ঘোষণার পর বাংলাদেশে টিকা আসা নিয়ে শুধু অনিশ্চয়তা নয়, সঙ্গে বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে।

টিকা আমদানি বিষয়ে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তার ধরন আসলে কী, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহলগুলো থেকে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেছে। গত নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকোর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে। বেক্সিমকোর দাবি, চুক্তিটি দুই দেশের সরকারের মধ্যে হয়নি, এটি বাণিজ্যিক চুক্তি। অথচ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগর সচিবের তরফে শোনা গেল, টিকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ের চুক্তি (জি টু জি) রয়েছে। অন্যদিকে টিকার ব্যাপারে জি টু জি চুক্তি হয়েছে কি না, তার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা আমার জানা নেই।’

টিকা আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরকারী বেক্সিমকোর তরফে শোনা যাচ্ছে এক কথা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব বলছেন ভিন্ন কথা, আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন অন্ধকারে—এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির ব্যাখ্যা কী? চুক্তিটি কোন পর্যায়ে বা কীভাবে হয়েছে, সেটা আমাদের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা জানবেন না?

বেক্সিমকো ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থানটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত সরকার যদি দেশের চাহিদা মেটানোর শর্ত দিয়ে থাকে, তবে সেটা সেরামকে বিবেচনায় নিতে হবে। সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, আগামী দুই মাস তাঁরা ভারতের চাহিদা পূরণ করবেন। ভারতকে ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার পরই রপ্তানি করা সম্ভব হতে পারে। তাঁর এ বক্তব্যের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার সম্ভাব্য সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সর্বশেষ এক টুইটে তিনি বলেছেন, সব দেশে টিকা রপ্তানির অনুমতি রয়েছে। অর্থাৎ ভারত টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি।

এখন বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, টিকা রপ্তানির অনুমতি থাকলেও ভারতের প্রাথমিক চাহিদা মিটিয়ে তা করতে হলে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যেতে পারে। বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া জরুরি। সরকারের তরফে এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না, বরং তারা আশাবাদের কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার টিকা রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দিলেও চুক্তি অনুযায়ী সময়মতো তা বাংলাদেশ পাবে। এমন আশাবাদের যৌক্তিক ভিত্তি কী?

আমরা মনে করি, চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে টিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে শুধু ভিত্তিহীন আশাবাদ নয়, বরং কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ ও বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি অব্যাহত থাকলে স্বার্থান্বেষী মহল নানা ধরনের অপপ্রচারের সুযোগ পাবে।

বেক্সিমকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে আমদানি ও ব্যবহারের জরুরি অনুমতি দিয়েছে। আমরা মনে করি, এই টিকা নাগরিকদের ওপর ব্যবহারের আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ যেসব টিকা ব্যবহার করে, তার সবই যেহেতু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া, এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম করা ঠিক হবে না।