কম সময়ে বড় আকারের মাছ

সম্পাদকীয়

মাছ চাষ ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে সাফল্য অর্জন করে যাচ্ছে। নতুন নতুন নানামুখী উদ্ভাবন ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ২০১৭ সাল থেকে কার্প ফ্যাটেনিং (কম সময়ে বড় আকারের মাছ) প্রযুক্তির যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তা ফল দিয়েছে। মাছ চাষে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালান করতে পারে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের মৎস্য চাষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এবং মৎস্য জীববিদ্যা কৌলিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল আলম এ প্রযুক্তিতে চাষিদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁদের উদ্ভাবিত কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তি মাছ চাষের এমন এক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অল্প সময়ে মাছ বড় করা সম্ভব। কলাপাড়ার মাছচাষিরা এ প্রযুক্তির সুফল পেয়েছেন।

স্বাদুপানির মাছে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। অন্যদিকে উৎপাদন বাড়ানোর হারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। আর চাষের মাছে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। চাষের মাছে বাংলাদেশের অবস্থানটি চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের পরে। নতুন এ প্রযুক্তি মাছ চাষে আমাদের সাফল্যকে আরও সামনে নিয়ে যেতে পারে।

কলাপাড়ায় মাছচাষি শামীম মাতবর প্রথমে এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। তিনি অল্প সময়ে বড় মাছ পাওয়ায় আশপাশের মাছচাষিরাও উদ্বুদ্ধ হন। এখন সেই অঞ্চলে অন্তত ২০টি পুকুরে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ হচ্ছে। মাছচাষিরা আগের তুলনায় অনেক লাভ করছেন। আমরা মনে করি এ প্রযুক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

কার্প ফ্যাটেনিং প্রযুক্তির বিস্তার ও সফলতার জন্য যা লাগবে তা হচ্ছে, স্থানীয় নার্সারিগুলোতে বড় আকারের পোনা উৎপাদন। অর্থাৎ নার্সারিগুলো যদি ছোট পোনা বিক্রি না করে বড় করে বিক্রি করে এবং মৎস্যচাষিরা যদি সেই পোনা কিছু সময় লালন করে পুকুরে চাষ করেন, তবে ফল পাওয়া যাবে। স্থানীয়ভাবে বড় আকারের র্পজাতীয় মাছের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করাই এ প্রযুক্তির সাফল্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে পোনা উৎপাদনকারী নার্সারিগুলোকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি।

আমরা আশা করব, কলাপাড়ার অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে এ প্রযুক্তিকে কীভাবে কার্যকরভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।