করোনা, দারিদ্র্য ও অপরাধবৃত্তি

সম্পাদকীয়

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বুধবার ঢাকার আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রোডে সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যাঁরা সিআইডির ভাষ্য অনুযায়ী ‘মলম পার্টির’ সদস্য। তাঁরা চেতনানাশক মলম ব্যবহার করে ওই পথে চলাচলকারী বাসগুলোতে যাত্রীদের টাকাপয়সা ও মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিতেন। এ রকম অনেক চক্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বছরই সক্রিয় থাকে। তবে ওই সাতজনের গ্রেপ্তারের খবরটির বিশেষত্ব হলো, গ্রেপ্তারের পরদিন সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে তাঁদের সম্পর্কে একটি তথ্য জানানো হয়, যা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তথ্যটি হলো, মলম পার্টির এই সদস্যদের সবাই পেশাদার অপরাধী ছিলেন না। কেউ দোকানের কর্মচারী ছিলেন, কেউ ছিলেন ফটোগ্রাফার। কোভিড মহামারির কারণে তাঁদের আয় কমে গেছে, আয় বাড়ানোর চেষ্টায় তাঁরা মলম পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের কেউ কেউ এ রকম স্বীকারোক্তি করেছেন।

আমাদের অনুমান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের এই স্বীকারোক্তি সিআইডির কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে বলেই সিআইডি কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দিয়েছে। এতে সাধারণভাবে তাঁদের প্রতি করুণার উদ্রেক হতে পারে, কেননা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবে আয় কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা যে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছেন, তা করুণার বিষয়ই বটে। কিন্তু সে জন্য তাঁদের কোনো অপরাধে লিপ্ত হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু বিষাক্ত মলম ব্যবহার করে লোকজনের অর্থকড়ি ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার মধ্যে তাঁদের নিষ্ঠুর মানসিকতারও প্রতিফলন ঘটে। তাই তাঁদের অপরাধ যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ দাবি করে।

চলমান মহামারির কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, যাঁরা সেই দুর্ভাগ্য এড়াতে পেরেছেন, তাঁদেরও অনেকের আয় নানা মাত্রায় কমে গেছে। এর ফলে কত মানুষ কত ধরনের ফৌজদারি অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন, তা জানা কঠিন। তবে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট হলো যে করোনা মহামারির পরোক্ষ প্রভাবে অপরাধবৃত্তি বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে।

এ রকম পরিস্থিতি সরকারের পক্ষে কীভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব, তা অর্থনীতিবিদ, সমাজ গবেষক ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। সংঘটিত অপরাধের আইনানুগ বিচার করার পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধবৃত্তিতে আরও মানুষ যেন জড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যে সচেষ্ট হওয়া উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় বিষয়টি নিয়ে কিছু করা যায় কি না, তা–ও ভেবে দেখা যেতে পারে।