করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে স্থবির থাকা জীবনযাত্রা পুরোমাত্রায় চালু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া কিছুই খুলতে আর বাকি নেই। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শীতের সময় করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে, যাকে দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইউরোপ-আমেরিকায় দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় আমাদের দেশে সেই সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। আর টিকা নিয়ে যে আশাবাদ, তা এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। ধারণা করা যায়, এ বছরের বাকি দুই মাসের মধ্যে টিকা আমাদের পর্যন্ত আসছে না।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামগ্রিক জীবনযাত্রার কথা বিবেচনা করে সবকিছু খুলে দেওয়ার হয়তো বিকল্প ছিল না। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি যেভাবে ঢিলেঢালা হয়ে পড়েছে, তা উদ্বেগজনক। করোনায় মৃত্যু ও সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে আসায় সবার মধ্যে একধরনের স্বস্তিভাব লক্ষ করা যাচ্ছে, এ স্বস্তির মধ্যে ব্যাপকভাবে সংক্রমণের আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কথা ছিল জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হবে, এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। গ্রামাঞ্চলে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবহার শুরুতেও কম ছিল, এখন তো প্রায় উঠেই গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শহরে বিশেষ করে রাজধানীতেও মাস্ক পরার প্রচলন উঠে যাচ্ছে। মানুষের অসচেতনতা সর্বক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অফিস-আদালত ও শিল্পকারখানাতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠান বা এর কর্ণধারেরা এড়াতে পারেন না।

নিম্নবিত্ত মানুষ, বিশেষ করে বস্তিবাসীদের অনেকেই করোনাভাইরাসকে অসুখ হিসেবেই মানতে চান না। তাঁরা পরীক্ষা করাতে চান না ভুল ধারণার কারণে। আবার নিম্নবিত্ত-উচ্চবিত্ত অনেকেই রোগ লুকিয়ে রাখেন সামাজিকভাবে হেয় হবেন এমন ভয়ে। এ অবস্থা মোটেও কাম্য নয়। সবার আগে দরকার প্রতিরোধ, সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইন প্রয়োগ করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত জুলাই মাসের শেষ দিকে বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। জনসমাগমস্থলে কোনোভাবেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না—এ কথা জানিয়ে সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মসজিদ, জনসমাগমস্থলে মাস্ক পরতে হবে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, সেসব জায়গায় কোনোভাবেই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না যান, তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার নির্দেশনা হচ্ছে আমরা সবাই যেন মাস্ক ব্যবহার করি।’

সাধারণ মানুষকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে কতটা উদ্বুদ্ধ, সতর্ক বা বাধ্য করা যাবে, তা বলা মুশকিল। কারণ তাঁদের বেশির ভাগই করোনা-পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেছেন। করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে গেছে কিংবা প্রকোপ কমেছে, এমনটা বলা হচ্ছে সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে। তবে এ তথ্যের বাইরেও কিন্তু প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঢাকা শহরের ৪৫ শতাংশ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণা পুরো শহরের জনগোষ্ঠীর হিসেবে কতটা প্রতিনিধিত্বশীল সে প্রশ্ন উঠছে, কিন্তু সরকারি তথ্য-উপাত্তের চেয়ে সংক্রমণের মাত্রা যে বেশি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

কোভিডের হানা শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে একজন রোগীকে দুর্বল করে দেয়, ওই রোগীর পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এটা ভুলে গেলে চলবে না, কোভিড কেবল রোগই নয়, পরিবারের জন্য এটা একটা বড় চাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়।

সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে আমাদের সবার সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মানুষকে সচেতন করতে সরকারের চাপ ও উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি অফিস-আদালত ও শিল্পকারখানায় কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হোক।