করোনার টিকা আমদানি

সম্পাদকীয়

কোভিড–১৯ প্রতিরোধের জন্য বিশ্বের কয়েকটি দেশে টিকার ব্যবহার অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে, এমন খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে আগামী সপ্তাহ থেকেই গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে পারে। বাংলাদেশে আমাদেরও একই পথে যেতে হবে। তবে এখানে সম্ভবত শিগগিরই তা শুরু করা যাবে না। করোনার টিকাবিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষকে টিকা প্রদানের বিশাল কর্মযজ্ঞটি কীভাবে সম্পন্ন করা হবে, এর জন্য সামগ্রিক প্রস্তুতি কতটা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, সে সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায় না।

প্রথমত, টিকা প্রদানের আগে তা সংগ্রহ করতে হবে। খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দুটি উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করা হবে। প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স, যেখান থেকে টিকা পাওয়া যাবে ভর্তুকি মূল্যে; আর দ্বিতীয়টি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত টিকা, যা আমাদের সরকারকে সরবরাহ করবে বাংলাদেশের বেসরকারি ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মা। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে একাধিকবার বলা হয়েছে, সরকার সম্ভাব্য সব উৎস থেকেই টিকা সংগ্রহ করবে। গতকাল প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার কোম্পানির টিকা আমদানির উদ্যোগ শুরু করেছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো ওষুধ ও টিকার মতো করোনার টিকাও আমদানি এবং এ দেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেবে এ–সংক্রান্ত নিয়মকানুন অনুসরণের শর্ত সাপেক্ষে।

আমরা মনে করি, সম্ভাব্য সব উৎস থেকে করোনার টিকা সংগ্রহের সরকারি ভাবনাটি যথাযথ, তবে টিকার গুণগত মান, কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমোদন পেয়েছে; যুক্তরাষ্ট্রও শিগগিরই অনুমোদন করবে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে তা সত্ত্বেও আমাদের দেশে আমদানির আগে এ টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে আমাদের নিজেদেরই। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য আমদানিকারকদের জমা দেওয়া টিকাসম্পর্কিত নথিপত্র খতিয়ে দেখা যথেষ্ট হবে কি না, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে বলে আমরা মনে করি। শুধু ফাইজার কোম্পানির টিকা নয়, সরকারি–বেসরকারি সব পর্যায়ে যেসব টিকা সংগ্রহ করা হবে, তার সব কটি সম্পর্কেই এ কথা প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়ত, টিকা আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা একান্ত জরুরি। বলা হচ্ছে ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। কিন্তু এ রকম সংরক্ষণব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই। সুতরাং আমদানিকারকেরা যেন তা করার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ‘কোল্ড চেম্বার’ ব্যবহার করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তা ছাড়া আমদানিকারকদের কাছ থেকে ব্যক্তিপর্যায়ে টিকা প্রদান পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায়ই টিকার যথাযথ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এখনই প্রস্তুতি শুরু করা প্রয়োজন।

আপাতত দুটি কোম্পানির বেসরকারি পর্যায়ে করোনার টিকা আমদানির উদ্যোগের কথা জানা গেল। এটা খুবই সম্ভব যে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান একই উদ্যোগ নেবে। তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একই ধরনের সতর্কতা ও সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

আরও যে বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, তা হলো বাজারে নকল টিকা বিক্রি এবং সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সম্ভাব্য নানা রকমের কারসাজি। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল ১৯৪টি দেশের পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে অরেঞ্জ অ্যালার্ট দিয়ে সতর্ক করেছে, দেশে দেশে করোনার নকল টিকা তৈরি ও বিক্রি হতে পারে এবং এসবের সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো আসল টিকার সরবরাহব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা রকমের কারসাজির চেষ্টা করতে পারে। সুতরাং আমাদের এ বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।