করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ দাফন কিংবা সৎকার নিয়ে জটিলতার খবর মাঝেমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সংক্রমণের ভয়ে স্বজনেরাও লাশের কাছে যেতে না চাওয়ায় শেষকৃত্যের জটিলতা বেঁধেছে—এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে। লাশ দাফনে অসহযোগিতার পাশাপাশি বাধা দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে।

এই অমানবিকতার উল্টো দিকে যে মানবিকতা, তার যথার্থ নিদর্শন দেখা গেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। সেখানে কয়েকজন তরুণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনের জন্য ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করেছেন। তাঁরা তাঁদের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছিলেন। প্রশাসন থেকে তাঁদের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।

নাটোরে ২৭ এপ্রিল প্রথমবারের মতো আটজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরের দিন আরও একজন শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন আগেই মারা যান। তাঁকে স্বাভাবিক উপায়ে দাফন করা হয়। এতে অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় কেউ সংক্রমিত হয়ে বা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তাঁকে ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী দাফনের লোকজন পাওয়া মুশকিল হবে। এ কারণে ১৫ জন তরুণ হিলফুল ফুজুল গঠন করেন। করোনায় মৃত ব্যক্তিদের শেষবিদায় জানানোর জন্য সরকারিভাবে একটি কমিটি রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে হিলফুল ফুজুল সমন্বয় করে কাজ করবে।

এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রত্যক্ষভাবে যে ভূমিকা রাখে, তার বাইরে এর সামাজিক ইতিবাচক প্রভাব থাকে। এ ধরনের কাজে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনোবল বহু গুণ বেড়ে যায়। মক্কায় চলমান অন্যায় সমর বন্ধে এবং লড়াইপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে মুসলমানদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তরুণ বয়সে বন্ধুদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন বানিয়েছিলেন। এখন শুধু দেশে নয়, বলা যায় গোটা বিশ্বেই একধরনের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি যাচ্ছে। এ কারণে মনে করা যেতে পারে সেই মহান সংগঠনের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে নাটোরের ১৫ তরুণ নতুন হিলফুল ফুজুল গড়েছেন। দেশের প্রতিটি জেলায় এ ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠলে করোনা মোকাবিলা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সংগঠনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া দরকার।