কাপাসিয়ার অভয়ারণ্য ‘কুহু’

একসময় গাজীপুর জেলার সব কটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল বনভূমি। ছোট ছোট টিলাসমৃদ্ধ এসব বনভূমি যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, তেমনি পশুপাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সময়ের ব্যবধানে সেই বনভূমির অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। বন কেটে তৈরি হয়েছে রিসোর্টসহ নানা স্থাপনা।

যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীরা বৈধ ও অবৈধ পথে পাহাড়, টিলা ও বনভূমি দখল করতে তৎপর, তখন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় ৮০ একর বনভূমিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা খুবই আনন্দের সংবাদ। উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়নের পাকিয়াব গ্রামে অবস্থিত এ বনভূমির মালিক জেলা কালেক্টরেট অফিস। সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় এর ওপর শ্যেনদৃষ্টি ছিল প্রভাবশালী মহলের। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংসদ সিমিন হোসেন বেশ কিছু টিলাযুক্ত এ স্থান অভয়ারণ্য করার উদ্যোগ নেন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুহু’। এ জন্য তাঁরা ধন্যবাদ পেতে পারেন। কুহু বা কোকিলের ডাক যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে, তেমনি রাজধানীর অনতিদূরে অবস্থিত এ অভয়ারণ্যও তাদের পদচারণে মুখর হবে আশা করা যায়।

সম্প্রতি সাংসদ সিমিন হোসেন অভয়ারণ্যে বৃক্ষ রোপণ করতে গিয়ে বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ প্রকৃতির কাছে যাবে, কিন্তু প্রকৃতিকে হত্যা করবে না। কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. ইসমত আরা জানিয়েছেন, অভয়ারণ্য নিয়ে তাঁদের বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে আছে বনভূমিতে দেশীয় পাখি যেন বিনা বাধায় বসবাস ও বংশবৃদ্ধি করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। বনের ভেতর পশুপাখির খাবারের উপযোগী গাছপালা রোপণ করা এবং একাধিক স্থানে পুকুর কাটা। তবে এসব কাজ জেলা বা উপজেলা প্রশাসন এককভাবে করতে পারবে না। এ জন্য বন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন হবে।

প্রথম আলোর শ্রীপুর প্রতিনিধি সরেজমিন বন ঘুরে দেখেছেন, নানা জাতের দেশীয় পাখির কলকাকলিতে জায়গাটি মুখর থাকে। বনে বেশ কয়েকটি টিলা আছে। লতাপাতায় ঘেরা ঘন বনে বনরুই, গন্ধগোকুলসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেখা মেলে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, অভয়ারণ্য ঘোষণায় তাঁরা খুশি। একই সঙ্গে ভয়ও আছে প্রভাবশালী কোনো মহল দখল করে না নেয়।

উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সমর্থন আছে। সম্প্রতি গাজীপুর জেলা প্রশাসকও এলাকাটি পরিদর্শন করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

কুহুকে সত্যিকার অর্থে অভয়ারণ্যে পরিণত করতে হলে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক তদারকি ও নজরদারি থাকতে হবে।