কুমিল্লা টাউন হল

সম্পাদকীয়

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। ৩ একর ৪৩ শতক জায়গা নিয়ে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মিলনায়তনটি পরবর্তী সময়ে কুমিল্লা টাউন হল হিসেবে গড়ে ওঠে। এর সামনে বিশাল মাঠে প্রায় বছরজুড়েই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন এই ভবন ভেঙে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানান। গত ৮ সেপ্টেম্বর দেশের শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের ৫০ জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী বিবৃতি দিয়ে ভবনটি না ভাঙার দাবি জানিয়েছেন। এরপর কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও তাদের সমর্থনে বিবৃতি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ কুমিল্লা টাউন হল ভাঙা হবে না বলে আশ্বাস দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে টাউন হল ভবনটি প্রত্নসম্পদ হিসেবে সংরক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল মান্নান ইলিয়াসের নেতৃত্ব ওই কমিটি হয়।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস ও কমিটি উপেক্ষা করে স্থানীয় কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, তাঁর অনুসারী জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন পেশাজীবীকে নিয়ে তথাকথিত গণশুনানিতে বর্তমান টাউন হল ভাঙার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন। অন্যদিকে সাংসদ আঞ্জুম সুলতানা গত সোমবার মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা টাউন হল ভাঙার সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কুমিল্লা টাউন হলের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। আমরা উন্নয়ন চাই, ঐতিহ্য ধ্বংস চাই না। এই ভবন কুমিল্লাবাসীর ঐতিহ্য বহন করছে। উন্নয়নের নামে কোনো অবস্থাতেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মহারাজাদের এই স্থাপত্যশৈলীকে ধ্বংস করা যাবে না।’

আমরাও মনে করি, এই স্থাপত্য রক্ষা করেই নতুন টাউন হল ভবন নির্মাণ করা হোক। টাউন হল ভবনের পাশে যে মার্কেট আছে, যা নিয়ে আদালতে রিট চলছে, প্রয়োজনে সেই ভবন ভেঙে নতুন টাউন হল ভবন নির্মাণ করা হোক। ত্রিপুরার মহারাজার স্মৃতি ও স্থাপত্যশৈলী রক্ষা করা হোক। এর আগে আমরা অনেক ঐতিহ্যবাহী ভবন ধ্বংস করেছি ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে। কুমিল্লার টাউন হলের ক্ষেত্রে যেন তা না হয়।

কুমিল্লায় নতুন টাউন হল হোক। কিন্তু পুরোনো ভবন ভাঙা যাবে না।