কুষ্টিয়ায় গরুচোরদের দৌরাত্ম্য

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির খবর আসছে। বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের খবর প্রতিনিয়তই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। কদিন আগে গাজীপুরের ভাওয়াল এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে সন্ধ্যার পর থেকে ডাকাত দলের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির খবর প্রকাশিত হয়েছে। রোববার প্রথম আলোর ষষ্ঠ পাতায় খবর ছাপা হলো, কুষ্টিয়া পৌর এলাকার শহরতলি মিনারপাড়াসহ পাশের দুটি গ্রামের কৃষকেরা গরুচোরদের দৌরাত্ম্যের কারণে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। কোনো সুনির্দিষ্ট এলাকায় দিনের পর দিন একই অপরাধ সংঘটিত হতে থাকলে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। গাজীপুর ও কুষ্টিয়ার ওই শহরতলিতেই শুধু নেই, সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সেটাই ঘটেছে।

কুষ্টিয়ার ভুক্তভোগী কৃষকেরা প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেছেন, চোরদের হাত থেকে গরু–মহিষ রক্ষা করার জন্য অনেক কৃষক রাতে গোয়ালঘরে শুয়ে অনেকটা নির্ঘুম কাটান। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সক্রিয়তার অভাবে। ওই এলাকায় কৃষকদের গরু–মহিষ চুরি হচ্ছে সংঘবদ্ধভাবে। চোরদের সিন্ডিকেট আছে বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন। তারা গত দুই বছরে শুধু মিনারপাড়াসহ পাশের দুটি গ্রাম থেকেই চুরি করেছে ৪৩টি গরু ও মহিষ।

উদ্বেগের বিষয় হলো, ওই অঞ্চলের গরুচোর সিন্ডিকেটগুলোর উপদ্রবে অতিষ্ঠ কৃষকেরা চোরদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। কারণ, তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই এলাকার এক প্রভাবশালী রাজনীতিক নেতার ভাই গরুচোরদের সিন্ডিকেটের মূল হোতা। ভুক্তভোগী কৃষকদের কয়েকজন সাহস করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় চুরির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করে কোনো প্রতিকার পাননি। মিনারপাড়া নামের মহল্লাটির পাশেই একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে; তা সত্ত্বেও ওই এলাকায় নিয়মিতভাবে গরু–মহিষ চুরি হচ্ছে। এলাকাবাসী কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কাছেও তাঁদের অভিযোগ তুলে ধরেছেন; কিন্তু তাঁদের গরু–মহিষ চুরি বন্ধ হয়নি। কয়েকজন ভুক্তভোগী কৃষক প্রথম আলোকে বলেছেন, সেখানকার স্থানীয় গরু–মহিষচোরদের সঙ্গে ভেড়ামারা উপজেলার কিছু গরু–মহিষ ব্যবসায়ীর যোগসাজশ আছে। চুরি হওয়া গরু–মহিষ ওই ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে চলে যায় পাশের জেলা পাবনার বিভিন্ন পশুর হাটে।

অর্থাৎ গরু–মহিষচোরদের আন্তজেলা নেটওয়ার্ক আছে এবং এটি একটি বড় পরিসরের অপরাধবৃত্তি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে অবিলম্বে এ নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রবল অভিযান চালানো। গরু–মহিষচোরদের উপদ্রব থেকে কৃষকদের রক্ষা করা পুলিশের একান্ত দায়িত্ব।