কোভিড চিকিৎসার খরচ

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়ার প্রায় ১০ মাস পর সরকার বেসরকারি পর্যায়ে এ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ফিসহ আনুষঙ্গিক সেবার একটি মূল্যতালিকা নির্ধারণ করেছে বলে গতকাল সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে। প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এ রোগের চিকিৎসার জন্য সরকার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে। সেগুলোর অধিকাংশই সরকারি, তবে কিছুসংখ্যক বেসরকারি হাসপাতালকেও কোভিড রোগীদের চিকিৎসার অনুমোদন দেওয়া হয়। করোনা হাসপাতাল নামে পরিচিত এসব চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনেক কোভিড রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রবণতা ছিল কোভিড রোগীদের গ্রহণ না করা; তবে সেই প্রবণতা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ফলে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোর তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোভিড চিকিৎসার ব্যয় অস্বাভাবিক মাত্রায় বেশি। কারণ, এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের ইচ্ছেমতো চড়া মূল্যের বিনিময়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছে।

মহামারি একটি দুর্যোগ, যখন সহানুভূতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে। দুঃখের বিষয়, এমন পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষের মধ্যে সহানুভূতির উল্টো প্রবৃত্তি জেগে ওঠে। অনেক বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান কোভিড চিকিৎসাকে অত্যধিক মুনাফা লাভের একটা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। আমাদের দেশে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যয় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই বেশি; কোভিড মহামারি এসে সেই ব্যয় আরও অনেক বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষত কোভিড রোগীদের প্রাণ রক্ষাকারী উপাদান অক্সিজেনের খরচ জোগাতেই অনেক রোগীর পরিবারের সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। কারণ, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যে রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।

এই নির্মম মুনাফালিপ্সা দমন করে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যয় যথাসম্ভব সামর্থ্যসীমার মধ্যে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অবশেষে নেওয়া হয়েছে—এটি নিশ্চয়ই একটি স্বস্তিকর সংবাদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ১০টি পরীক্ষার মূল্য ৪০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অক্সিজেনের মূল্যও বেঁধে দিয়েছে। পরীক্ষাগুলোর খরচ মোটের ওপর যুক্তিসংগত, তবে অক্সিজেনের মূল্য বেশ চড়া হারে নির্ধারণ করা হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১০ থেকে ১৫ লিটার মাত্রার অক্সিজেনের ঘণ্টাপ্রতি প্রবাহের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ টাকা। একজন কোভিড রোগীর ২৪ ঘণ্টা এই মাত্রার অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে এক দিনেই শুধু অক্সিজেনের পেছনে ব্যয় ৮ হাজার টাকা পেরিয়ে যাবে। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল; এই মূল্যহার অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড চিকিৎসার ব্যয়ে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য মূল্য নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করাই যথেষ্ট হবে না। এ মূল্যতালিকা যেন শতভাগ মেনে চলা হয়, সরকারের বেঁধে দেওয়ার দামের চেয়ে একটি পয়সাও যেন কোনো কোভিড রোগীর কাছ থেকে আদায় করা না হয়, তা নিশ্চিত করাও জরুরি। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগীদের আত্মীয়স্বজনেরও সচেতনতার প্রয়োজন হবে। প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড চিকিৎসার মূল্যতালিকা দৃশ্যমানভাবে ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং রোগীদের আত্মীয়স্বজনের জন্য অভিযোগ বাক্স খুলতে হবে।