খাদ্যপণ্যের চড়া দাম

করোনাকালে মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। যাঁদের চাকরি আছে, তাঁদেরও বেতন বা মজুরি কমেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দা চলছে। এ অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে তা সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি করে। দুঃখের বিষয়, দেশের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে নতুন করে প্রতি কেজি মসুর ডালের (ছোট দানা) দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২২ শতাংশ। আলুর দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশি আদার দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। দারুচিনিতে সাত দিনের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। চালের বাজার অনেক দিন ধরেই চড়া। ইলিশ ছাড়া মাছের দামও বেড়েছে।

করোনার কারণে সারা বছরই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়তির দিকে ছিল এবং এখনো আছে। শুরুতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করেছিলেন। বর্তমানে পণ্যের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক। আমদানিও ব্যাহত হয়নি। এখন বলা হচ্ছে বন্যা ও আম্পানের কারণে সবজি, আমনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে চাল, ডাল, সবজি, আলু, পেঁয়াজ, মুরগি ও ডিমের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বন্যা ও আম্পানের কারণে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, আদা, রসুন, গরম মসলাসহ যেসব পণ্য আমদানিনির্ভর, সেসবের দাম বাড়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? আন্তর্জাতিক বাজারে তো এসব পণ্যের দাম বাড়েনি। তারপরও দাম বাড়ছে। এর পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। আগে ছোট–বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীরা আমদানি করতেন। এখন গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে পণ্যের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দেয়।

ব্যবসায়ীদের মুনাফালিপ্সু অংশের কারসাজি বন্ধ করতে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রথমত, চাহিদামাফিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকলে পণ্যের দাম বাড়ে। দ্বিতীয়ত, ব্যবসায়ীরা যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন, সে জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করলে সেখানকার সব ব্যবসায়ী ধর্মঘট করেন। এতে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যায়। তাই বিচ্ছিন্ন অভিযান চালালে কোনো লাভ হবে না। মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে সার্বক্ষণিক ও সর্বত্র।

তা ছাড়া কোনো পণ্যের ঘাটতি দেখা দিলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি ও বাজারজাত করতে হবে। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার থেকে টিসিবি খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। এবার সংকট কেবল পেঁয়াজের মধ্যে সীমিত নেই। সরকার বলছে, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে দাম বাড়ছে কেন? এর পেছনেও কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। আম্পান ও বন্যার কারণে আমন চাষ ব্যাহত হয়েছে। এ অবস্থায় চাল আমদানির বিষয়টিও অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রয়োজনে সাময়িক আমদানি শুল্ক কমানো যেতে পারে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, চালের দাম বাড়লে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়ে যায়। তাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।