খাসিয়াপুঞ্জিতে হামলা

সম্পাদকীয়

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ইছাছড়া খাসিয়াপুঞ্জিতে ৫২টি খাসিয়া পরিবার বসবাস করে আসছে বহু বছর ধরে। প্রতিবেশী মুসলমানদের সঙ্গে এত দিন তারা মিলেমিশেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ এক দুবাইপ্রবাসী খাসিয়াদের পানের জুম দখল করে আতঙ্ক তৈরি করেছেন। আইনকানুন ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাও তিনি মানছেন না।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, খাসিয়াপুঞ্জিতে জেসপার আমলেংরংয়ের প্রায় পাঁচ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত পানের জুমের ওপর শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে রফিক মিয়া নামের ওই দুবাইপ্রবাসীর। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে টাট্রিউলি গ্রামের বাসিন্দা রফিক মিয়ার নেতৃত্বে ১৫–২০ জন লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে জুমটি দখল করে নেন। এ ব্যাপারে জেসপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ৯ নভেম্বর ইউএনও এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল জুমে গিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় জুমে অবৈধভাবে নির্মিত দুটি কাঁচা ও টিনশেডের একটি আধা পাকা ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওই জমি জেসপারকে বুঝিয়ে দেন।

কিন্তু কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। দখলদারের কাছে সরকার প্রশাসনিক নির্দেশ ও নিষেধাজ্ঞার কোনো মূল্য নেই। ওই দিন সন্ধ্যায় রফিক মিয়ার নেতৃত্বে ৫০–৬০ জন লোক দেশি অস্ত্র নিয়ে পুঞ্জির আশপাশে অবস্থান নেন এবং তাঁরা একটি মুদিদোকান ও পুঞ্জির গির্জায় ঢুকে ভাঙচুর ও আসবাব তছনছ করেন। এই দুঃসাহস তাঁরা কোথায় পেলেন? নিরুপায় হয়ে তাঁরা রফিক মিয়া এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। কুলাউড়া থানা-পুলিশ এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অপর তিন আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে প্রধান আসামি রফিক মিয়া গ্রেপ্তার না হওয়ায় খাসিয়ারা আতঙ্কে আছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান না নিলেও তলে তলে দখলদারকে ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

রফিক মিয়ার দাবি, তিনি এই জমি কিনে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন যাচাই করে দেখেছে, তাঁর দলিল ভুয়া। কেননা, খাসিয়ারা বংশপরম্পরায় এ জমি ভোগদখল করে আসছেন। কেউ এ জমি হস্তান্তর করতে পারেন না। অবিলম্বে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার ও পানের জুমটি মালিকের হাতে ন্যস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।

সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তঁাদের জমি যাতে কেউ দখল করতে না পারে, সে জন্য ভূমি কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আমরাও মনে করি, দখলদারদের হাত থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জমি রক্ষা করতে এর বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার ছিল।