খুনের আসামি সাবেক সাংসদ

গত রোববার রাজধানীর পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কে যে খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে একজন সাবেক সাংসদের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ এম এ আউয়াল জমি দখল করার উদ্দেশ্যে জমির মালিক সাহিনুদ্দিনকে খুন করিয়েছেন ভাড়াটে লোক দিয়ে। সাত বছর বয়সী শিশুপুত্রের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

পত্রিকার খবর অনুযায়ী, সাবেক সাংসদ নিজের আবাসন প্রকল্প হ্যাভেলি প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের জন্য সাহিনুদ্দিনের ১০ একর জমি দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু সাহিনুদ্দিন জমি দিতে না চাইলে প্রথমে তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। সেই মামলায় সাহিনুদ্দিনকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার পরই এ খুনের ঘটনা ঘটল। খুন করার পর খুনিরা সাবেক সাংসদকে টেলিফোন করে বলেন, ‘স্যার, ফিনিশ।’

এ খুনের ঘটনা কয়েকটি প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। একজন সাবেক সাংসদ প্রকাশ্যে ভাড়াটে দিয়ে মানুষ খুন করানোর দুঃসাহস কীভাবে পেলেন? কীভাবে তিনি সরকারের অধিগ্রহণ করা জমি, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুললেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কী করেছে?

পল্লবীর বুড়িরটেক এলাকার কিছু জমি অনেক আগে সরকার অধিগ্রহণ করে। সাবেক সাংসদ সেই জমি উদ্ধার করে দেওয়ার কথা বলে সেখানে নিজের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন। আর এ জন্য তিনি সরকারের অধিগ্রহণ করা জমির পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও দখল করেন। নিজের দখলদারি বজায় রাখতে এই সাবেক আইনপ্রণেতা একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেন, যারা এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রিকশা টোকেন বাণিজ্য, মাদক, জুয়াসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। ওই সাবেক সাংসদ সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত মাসোহারা দিতেন বলেও সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়।

খোদ রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। যদিও তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও খুনের একাধিক মামলা ছিল। থানা-পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে হয়তো সাহিনুদ্দিনকে এভাবে জীবন দিতে হতো না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাহিনুদ্দিন খুনের আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। সাবেক সাংসদ এম এ আউয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম, সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মানিক পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন। আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতেই নির্ধারিত হবে তিনি দোষী না নির্দোষ। বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি হবে, বন্দুকযুদ্ধে নয়। কাউকে রেহাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে কি এই বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হয়েছে?

ইতিমধ্যে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আছেন খুনের প্রত্যক্ষদর্শীও। এসব সূত্র ধরে মামলার দ্রুত তদন্ত করা কঠিন নয়। সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। সেই সঙ্গে সাবেক জনপ্রতিনিধির প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে যঁারা খুন-দখলের মতো অপকর্মে লিপ্ত আছেন, তঁাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।