খুরা রোগের টিকা উদ্ভাবন

বাংলাদেশে যে রোগে গবাদিপশু, বিশেষ করে গরু সবচেয়ে বেশি মারা যায়, তার নাম খুরা রোগ। এই রোগ হলে পশুর গায়ে জ্বর আসে। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখগহ্বর ও পায়ের খুরের মাঝে ঘা হয়, ওলানে ফোসকা পড়ে। পশু খোঁড়াতে থাকে। মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। গর্ভবতী গাভির গর্ভপাত ঘটে। ৬ মাস বয়সের নিচে আক্রান্ত বাছুরের ৯৫ শতাংশই মারা যায়।

বাংলাদেশে সব ঋতুতে মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগ দেখা যায়, কিন্তু বর্ষার শেষে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। সরকারি তথ্য বলছে, এ রোগের কারণে দেশে প্রতিবছর ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়। এই রোগ প্রতিরোধে বর্তমানে পশুকে যে টিকা দেওয়া হয়, তা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু এসব বিদেশি টিকা খুব একটা কাজ করে না। এসব টিকা উৎপাদনে যে ভাইরাস ব্যবহৃত হয়, তা বাংলাদেশে বিদ্যমান ভাইরাস থেকে ভিন্ন কিংবা ওই টিকাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিজেন থাকে না। ফলে প্রায়ই এগুলো কাজ করে না।

এই ভয়াবহ সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খুলে দিয়েছেন আমাদের দেশেরই একদল গবেষক। তাঁরা খুরা রোগ প্রতিরোধে দেশে সঞ্চরণশীল ভাইরাস দ্বারা একটি কার্যকরী টিকা উদ্ভাবন করেছেন। ১৭ জনের গবেষক দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এ উদ্ভাবনের পেটেন্টের জন্য ইতিমধ্যে আবেদনও করা হয়েছে।

উদ্ভাবিত নতুন টিকা বাংলাদেশে বিদ্যমান খুরা রোগের তিন ধরনের ভাইরাসের সব ধরনের সংক্রমণ থেকে গবাদিপশুকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। সাধারণ গৃহস্থ ও খামারিদের জন্য তো বটেই, গোটা জাতির জন্যও এটি বড় সুখবর। এই উদ্ভাবন প্রাণিসম্পদ গবেষণার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। এই টিকা সবার কাছে পৌঁছে গেলে গরু, মহিষ ও ছাগলের মৃত্যুহার অনেক কমে আসবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশে ‘এই প্রকল্প-সেই প্রকল্প’, ‘অমুক গবেষণা-তমুক কার্যক্রম’-এর নামে জনগণের কোটি কোটি টাকা অপচয় ও নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। এবার একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। অণুজীববিজ্ঞান বিভাগকে গবেষণার জন্য দুটি উপপ্রকল্পের আওতায় মোট ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। টাকাটা যে শতভাগ উশুল হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

একেকটি উদ্ভাবন দেশকে উন্নতির একেকটি স্তরে নিয়ে যায়। খুরা রোগের প্রতিষেধক উদ্ভাবনের কথা বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা চিন্তা করা যেতে পারে।