খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পাদকীয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রোববার থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে। এই দুই শিক্ষার্থী হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ওরফে নোমান এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমামুল হোসেন।

এর আগে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড। ঘটনার সূচনা গত বছর ১ জানুয়ারি ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত আন্দোলন থেকে। শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন, তখন দুই শিক্ষক সেখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। সে ক্ষেত্রে যদি অপ্রীতিকর কিছু ঘটে থাকে, তার দায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও এড়াতে পারেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদ্বয়কে তদন্ত কমিটি তলব করলেও তাঁরা জবাব দেননি। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদ্বয় বলেছেন, তাঁরা প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ৫ দফা দাবিতে সেদিন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। কেন তাঁদের দুজনকে অভিযুক্ত করা হলো?

কোনো শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর অসৌজন্যমূলক ব্যবহার কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। তবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য এককভাবে শিক্ষার্থীদের দায়ী করা যায় না। তাঁরা যদি অন্যায় দাবিতেও আন্দোলন করে থাকেন, প্রশাসন ও শিক্ষকদের উচিত ছিল তাঁদের বোঝানো। কিন্তু তা না করে যে স্থানে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিলেন, সেখান দিয়ে দুই শিক্ষক গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁদের অনুরোধ উপেক্ষা করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহিষ্কারাদেশের সঙ্গে এই দুই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জড়িত। এই সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছে, তখনো দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলে তাঁরা আমরণ অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ খবর ওই দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়।

অতএব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দুই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়, এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। বহিষ্কারাদেশের মতো কঠিন শাস্তি না দিয়ে লঘু দণ্ড দেওয়া যেতে পারে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি কিংবা অভিযোগকারী শিক্ষকের মান-মর্যাদা এতটুকু ক্ষুণ্ন হবে না।