খুলনায় অক্সিজেন ব্যাংক

একজন মানুষ সারা জীবন মুক্ত বাতাস থেকে যে পরিমাণ শ্বাসবায়ু বা অক্সিজেন টেনে নেয়, তার আর্থিক মূল্য কত? এই প্রশ্ন আপেক্ষিক, ক্ষেত্রবিশেষে অবান্তর। উত্তর তথৈবচ। কারণ, মুক্ত বাতাসের অক্সিজেনের অর্থমূল্য নির্ধারণের মাপকাঠি নেই। তবে সেই শ্বাসবায়ু যখন সিলিন্ডারবন্দী হয়, তখন তার আর্থিক মূল্য ধরা হয়। চাহিদা ও জোগানের প্রচলিত সূত্র মেনে সেই অক্সিজেনের দাম ওঠানামা করে।

করোনা মহামারির কারণে সিলিন্ডারের আকাল পড়ছে, এর দাম আকাশ ছুঁচ্ছে। অনেক দরিদ্র রোগী অর্থাভাবে অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দিতে হবে, এমন অনেক রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় পাওয়া যাচ্ছে না, তার আগেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটছে।

এ অবস্থার মধ্যে কিছু হৃদয়বান মানুষ সিলিন্ডারের অক্সিজেনকে সহজলভ্য ও ক্ষেত্রবিশেষে বিনা মূল্যের সেবা হিসেবে নিয়ে এসেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘অক্সিজেন ব্যাংক’। সেখানে ফোন করার পর রোগীর বাড়িতে চলে আসে অক্সিজেন। প্রতিদিন বহু পরিবারের অক্সিজেন সিলিন্ডারের দুশ্চিন্তা দূর করছে এসব অক্সিজেন ব্যাংক।

করোনার সময়ে এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তাদের মধ্যে খুলনায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে ‘খুলনা
অক্সিজেন ব্যাংক’ নামের একটি সংগঠন। স্থানীয় কয়েকজন যুবক মিলে গড়ে তুলেছেন সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত প্রায় সাত শ রোগীকে তাঁরা অক্সিজেন সহায়তা দিতে পেরেছেন।

মুঠোফোনে রোগীর অবস্থা আর অবস্থান জানার কিছুক্ষণের মধ্যে বিনা খরচেই রোগীর ঘরে অক্সিজেন নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যান। অক্সিজেন শেষ হলে তা রিফিল করা, সময়মতো রোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়াসহ সব কাজই হয় স্বেচ্ছাশ্রমে। ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন। সিলিন্ডারের জন্য কোনো ফি বা নিরাপত্তা জামানত রাখা হয় না। তবে কেউ কেউ রিফিলের টাকা দিয়ে দেন। তাঁদের ‘খুলনা ব্লাড ব্যাংক’ ও ‘খুলনা ফুড ব্যাংক’ নামে আরও দুটি সংগঠন আছে।

সমাজের হৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহায়তায় চলা এ সংগঠনের এখন ৪৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সিলিন্ডারের অক্সিজেন ছাড়াও কীভাবে শ্বাসের কষ্ট কমানো যায়, সে পদ্ধতি স্বেচ্ছাসেবকেরা রোগীর স্বজনদের শিখিয়ে থাকেন। প্রতিটি জেলায় এ ধরনের সংগঠন চালু হলে করোনা মহামারির মতো দুর্যোগে মানুষ ভরসা পাবে।