গণটিকা কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা

সম্পাদকীয়

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার যে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছিল, তা অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে। এখন এটা মনে করা কঠিন যে শিথিল বিধিনিষেধকে কঠোর করে সরকার মানুষকে আবার ঘরবন্দী করতে পারবে।

সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব অধিকসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার বিকল্প নেই। এই প্রেক্ষাপটে সপ্তাহে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা সময়ের দাবি। ৭ আগস্ট থেকে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা। এ জন্য টিকাপ্রার্থীদের নিবন্ধনের প্রয়োজন হবে না। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেই চলবে। বর্তমানে নিবন্ধন করে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা–ও অব্যাহত থাকবে।

কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে টিকা ব্যবস্থাপনায় যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর আসছে, তা উদ্বেগজনক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি বুথে একজন স্বাস্থ্যকর্মী টিকাপ্রার্থীদের শরীরে সুচ ঢুকালেও টিকা না দিয়ে পাশের মেঝেতে রাখা ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছেন। কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা করে ২০টি সিরিঞ্জে টিকা পাওয়া যায়। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. রবিউল হোসেন সেখানে মজুত টিকা থেকে দুই হাজার ডোজ সরিয়ে ফেলে হুইপ সামশুল হকের ইউনিয়ন শোভনদণ্ডীতে ৩০ ও ৩১ জুলাই আগাম টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি টিকা দেওয়ার বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। ময়মনসিংহে ছাত্রলীগের এক কর্মীর সঙ্গে বচসায় আড়াই ঘণ্টা টিকা দেওয়া স্থগিত ছিল। এসব আলামত উদ্বেগজনক বলেই মনে করি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১ কোটি ৩৭ লাখ ডোজ টিকা সরকারের কাছে মজুত আছে। আরও টিকা আসছে। সে ক্ষেত্রে ধারণা করা যায়, কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় টিকা পেতে সমস্যা হবে না। সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনা। যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ দিনে তিন লাখ টিকা দিতেই হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে সাত দিনে এক কোটি টিকা কীভাবে দেবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে সরকারে কি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আছে? আর কেবল প্রস্তুতি থাকলেই হবে না, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল থাকতে হবে। টিকা পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন থাকতে হবে।

আমরা স্বাস্থ্যসেবার যেদিকে তাকাই, সেদিকেই অব্যবস্থা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির আলামত দেখতে পাই। কিন্তু কর্তাব্যক্তিরা নির্বিকার। সাহেদ-সাবরিনার মতো কেলেঙ্কারি না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের হুঁশ হয় না।

সরকারের বিধিনিষেধ খুব একটা কাজ দেয়নি, জনগণকে স্বাস্থ্যবিধিও মানাতে পারেনি। এখন যদি গণটিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা দেখা দেয়, তবে পরিস্থিতি শোচনীয় আকার ধারণ করবে। তবে আশার কথা, বাংলাদেশ অতীতে টিকা কর্মসূচিতে সফল হয়েছে। করোনাকালেও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় সাড়ে তিন কোটি শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। তাই ৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া টিকা কর্মসূচি সফল করা অসম্ভব নয়, যদি সরকারের কঠোর নজরদারি থাকে এবং স্বাস্থ্য বিভাগে লুকিয়ে থাকা দুষ্ট চক্রকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে পারে।