কোভিড–১৯ মহামারি রোধের লক্ষ্যে কিছুদিন অন্য সবকিছুর মতো গণপরিবহনও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তারপর যখন আবার তা চালু হলো, তখন সরকার গণপরিবহনের মালিকদের চাপে ভাড়া বাড়িয়ে দিল। কিন্তু যে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া সরকার নির্ধারণ করে দিল, গণপরিবহনের মালিকেরা তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করতে শুরু করলেন। লকডাউনের কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই মাস আয়রোজগারহীন জনসাধারণের ওপর এ অন্যায় জবরদস্তি চলছে, কিন্তু সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে, বাস–মিনিবাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি ভাড়া আদায় করছে। শুধু তাই নয়, ভাইরাস সংক্রমণ এড়ানোর উদ্দেশ্যে গণপরিবহনের যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের জন্য সব ধরনের যাত্রীবাহী যানবাহনের অর্ধেক আসন খালি রেখে চলাচলের যে নির্দেশ সরকার দিয়েছে, বাস–মিনিবাসগুলো তা–ও মানছে না।
একদিকে তারা সরকারের নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ হারে ভাড়া আদায় করছে, অন্যদিকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সর্বোচ্চসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের এই উদগ্র মুনাফালিপ্সায় একদিকে জনসাধারণের পকেট কাটা হচ্ছে, অন্যদিকে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও স্বীকার করেছেন যে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু এসব অন্যায় বন্ধ করার জন্য সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মন্ত্রী শুধু কঠোর কঠোর কথা বলে যাচ্ছেন। যেমন গত মঙ্গলবার তিনি ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যাঁরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন, তাঁরা এই মহামারিতে গণশত্রু বলে চিহ্নিত হবেন। তাঁরা সরকারকে দেওয়া চুক্তি ভঙ্গ করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত একটিও ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। সড়ক পরিবহন আইনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের দায়ে এক মাস কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। মন্ত্রী যখন দেখতেই পাচ্ছেন যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে দণ্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, তখন আইন প্রয়োগ করে অপরাধীদের কেন শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগ নেই?
অতিরিক্ত ভাড়ার জবরদস্তি থেকে জনসাধারণকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।