গাজায় ইসরায়েলি হামলা

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪১টি শিশুসহ ১৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পূর্ব জেরুজালেম থেকে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদ এবং আল–আকসা মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশের হামলার প্রতিবাদে গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অনুসারীরা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। এতে একটি শিশুসহ ১০ ইসরায়েলি নিহত হন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় নির্বিচার হামলা চালায়। ইসরায়েলি বিমান থেকে একের পর এক বোমাবর্ষণে বহু আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ১০ হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

গত শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার আল-জাজিরা ও এপি ভবন ধসে পড়ে। হামলার আগে ওই ভবনের বাড়ির মালিককে টেলিফোন করে হামলার আগাম সংবাদ জানিয়ে এক ঘণ্টা সময় দেওয়া হয় সেখানকার মানুষ ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। যদি ইসরায়েলি হামলার উদ্দেশ্য হয় হামাসকে শাস্তি দেওয়া, তাহলে সংবাদমাধ্যমের অফিস কেন বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো? গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলা নিয়ে যখন বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ উদ্বিগ্ন, তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যত দিন প্রয়োজন হামলা চলবে।’ তাঁর এ ঘোষণা কেবল উসকানিমূলক নয়, বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংসতার পক্ষে নির্লজ্জ চেষ্টাও। বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি আস্থা ভোটে জয়ী হলেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নেতানিয়াহু বেকায়দায় আছেন। ধারণা করা যায়, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান সংহত করতে ফিলিস্তিনিদের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংঘাত বন্ধের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করেছেন। কিন্তু তাঁর টেলিফোন সংঘাত বন্ধ করবে না বাড়াবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে—এমন মন্তব্য যেমন পক্ষপাতদুষ্ট, তেমনি তা কার্যত গাজায় নিরীহ মানুষ হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার শামিল। আত্মরক্ষার অধিকার কি ইসরায়েলের একচেটিয়া? আত্মরক্ষার অধিকার তো ফিলিস্তিনিদেরও রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার আছে তাদের হৃত রাষ্ট্র পুনরুদ্ধারের।

আত্মরক্ষার অজুহাত তুলে ইসরায়েল একের পর এক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করবে, বোমা মেরে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তাদের হত্যা করবে, এটি হতে পারে না। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে চলেছে। এ ক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক আইনকানুন রীতি–নীতি সব উপেক্ষা করে আসছে। সেই সঙ্গে নিপীড়ন চালাচ্ছে ইসরায়েলের ভেতরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ওপরও। গত সপ্তাহে সংঘাতের শুরু পূর্ব জেরুজালেম থেকে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বিশ্বের বড় বড় শহরে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা করেছে। আমরা ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রথম দফা বৈঠক কোনো ফল দেয়নি। রোববার আবার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতা এ ধরনের বৈঠকের ব্যাপারে আশাবাদী হতে দেয় না। ইসরায়েলি দখলদারি ও সম্প্রসারণ নীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতিই যে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আনতে পারে, এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

গাজায় ইসরায়েল সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় অবিলম্বে বন্ধ হোক।