গাজীপুর শিল্পকলা একাডেমি

সম্পাদকীয়

যেখানে অনেক উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব ভবন আছে, সেখানে গাজীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি চলছে রাজবাড়ির চিলেকোঠার খুবই অপরিসর ঘরে। গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও আদালত ভবন গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িতে। ১৫ একর আয়তনবিশিষ্ট সেই বাড়িতে অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ঠাঁই হলেও শিল্পকলা একাডেমির জন্য বরাদ্দ হয়েছে চিলেকোঠার অপরিসর কয়েকটি ছোট্ট কক্ষ। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, বাদন, চিত্রকলা, নৃত্য ও নাটক—এই পাঁচ মাধ্যমে সুকুমারবৃত্তি চর্চা করানো হয় শিশু-কিশোরদের। গাজীপুর শিল্পকলা একাডেমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পালাক্রমে শেখানো হয়। কোনো দলকে একটি মাধ্যম শেখাতে গেলে অন্য মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা বাইরে অপেক্ষা করে।

এই শিল্পকলা একাডেমির পাশেই আদালত। সরকারি কার্যদিবসে সেখানে লাইন বেঁধে বন্দীদের নিয়ে আসা হয় হাজিরা দেওয়ায়। বন্দীদের দেখে শিশু-কিশোরদের মনে বিরূপ ছাপ পড়তে পারে—এ কথা ভেবে অনেক অভিভাবক তাঁদের শিল্পকলা একাডেমিতে পাঠান না। এ ছাড়া চিলেকোঠার নিচে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) অফিস থাকায় সারা দিন সেখানে ভিড় লেগে থাকে। চিলেকোঠার সিঁড়িগুলোর বিভিন্ন অংশ বেরিয়ে যাওয়ায় ওঠানামাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় অনেক অভিভাবকই সন্তানদের শিল্পকলা একাডেমিতে পাঠাতে চান না।

আর্থিকভাবে যাঁরা সচ্ছল, তাঁরা বাসায় শিক্ষক রেখে সন্তানদের শেখাতে পারেন। কিন্তু অসচ্ছল পরিবারের অভিভাবকদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জেলার বিপুলসংখ্যক ছেলেমেয়ে সুকুমারবৃত্তির চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শিল্পকলা একাডেমির নিজস্ব ভবন না থাকার কারণ হিসেবে প্রশাসন জমি না পাওয়ার দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু বিশাল রাজবাড়ির আশপাশে শিল্পকলা একাডেমির জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাবে না, এটি বিশ্বাস করা কঠিন। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের ভাষ্য অনুযায়ী বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামের পাশে ৬০ শতক জমি পাওয়া গেছে। প্রশাসন উদ্যোগী হলে আগেই জমি পাওয়া সম্ভব ছিল।

তবে জমি পেলেও এখনই সেখানে শিল্পকলা একাডেমি সরিয়ে নেওয়া যাবে না। ভবন নির্মাণ করতে কয়েক বছর লেগে যাবে, এই সময়টা বিকল্প কোনো ভবনে শিল্পকলা একাডেমি যাতে কাজ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু-কিশোরদের সুকুমারবৃত্তির চর্চা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

আশা করি, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে একবার বরাদ্দ ফেরত গেছে। দ্বিতীয়বার যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়।