গড়িমসি কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে স্পর্শ করছে না বললেই চলে। এখানে নদী দখল হয়, বন উজাড় হয়, নির্বিচার পাহাড় কাটা হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের নীরব উৎসব চলছে যেন দেশজুড়ে। সিলেটের জৈন্তাপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একের পর এক পাহাড়–টিলা কেটে পাথর ব্যবসার বিশাল পসরা বসানোর সেই উৎসবেরই একটি অংশ। তাঁদের ইন্ধনে তাৎক্ষণিক লাভের আশায় সাধারণ মানুষও পাহাড়–টিলা ধ্বংসে মেতেছে।

জৈন্তাপুরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়মালা। সীমান্ত নিকটবর্তী সারীঘাট থেকে চারিকাটা ইউনিয়ন পুরোটা মেঘালয়ের পাহাড়ের মতো একটি বেষ্টনী। পঞ্চাশের পাহাড় নামের ওই বেষ্টনীর আশপাশে রয়েছে আরও অর্ধশতাধিক টিলা। পঞ্চাশের পাহাড়ের ঢালে পড়েছে ছোট ছোট টিলা। এসব টিলা খুঁড়েই পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রায় দেড় মাস ধরে সেখানে পাথর-বাণিজ্য চলছে। পাহাড়-টিলার পাদদেশের বাসিন্দারা পাথর তোলাকে বাড়তি রোজগার হিসেবে নিয়েছেন। রাস্তার পাশেই পাথরের স্তূপ করে রাখা হয় আর রাতে সেগুলো বিক্রি হয়।

জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান চালিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক বলছেন, ‘অবৈধ এই তৎপরতা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ অথচ পরিবেশ আইন ছাড়াও সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-টিলা কাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের সরাসরি নির্দেশনা আছে। সে অনুসারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কালক্ষেপণ করছে। তার মানে পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক পর্যায়ে গেছে।

সম্প্রতি সিলেটে একাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়-টিলা কাটার এমন প্রবণতা ছোট করে দেখার অবকাশ নেই বলে গবেষকদের মত। কারণ, এভাবেই পাহাড়-টিলা নড়বড়ে হয়। একসময় সেটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ জন্য এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পরিবেশসচেতনতা বাড়াতে হবে। পাহাড় কাটার সঙ্গে যুক্ত বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উৎসাহ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের।