ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র

সম্পাদকীয়

বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসগুলো বেশ প্রবল হয়ে থাকে; কখনো কখনো অতি প্রলয়ংকরী রূপে হানা দিয়ে বিপুল ধ্বংস সাধন করে। সিডর কিংবা আইলার মতো ভয়াল দুর্যোগের স্মৃতি বেশি পুরোনো নয়। সর্বশেষ গত বছর করোনা মহামারির মধ্যেই আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। খেয়ালি প্রকৃতির এই রুদ্র রূপ ও ধ্বংসাত্মক তাণ্ডবের সামনে আমাদের উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় দুই কোটি মানুষের অবস্থা নিতান্ত অসহায়। ঘরবাড়ি, খেতের ফসল, জলাভূমির মাছ—সব ক্ষেত্রেই তারা ভীষণ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। অতীতকালে তারা প্রাণেও মারা পড়ত বিপুল সংখ্যায়, তবে এখন এই ট্র্যাজেডি অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

আবহাওয়াবিজ্ঞানের অগ্রগতি, দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রচারের ব্যবস্থার উন্নতি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিপৎকালে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার ফলে এখন প্রাণহানি অনেক কম হয়। তবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে, এমন অনেক গ্রামের সব বাসিন্দার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বরগুনা জেলার পাথরঘাটা ইউনিয়নের বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী চরদুয়ানী ও পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের বৃহত্তর অংশই এখনো সে অর্থে অরক্ষিত রয়ে গেছে। ওই গ্রামগুলোর মোট বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। কিন্তু সেখানে যে ২২টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র আছে, সেগুলোর মোট ধারণক্ষমতা সাড়ে ১৪ হাজার। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস এলে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কোনো জায়গা খুঁজে পাবেন না।

গত বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উপজেলার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, ওই এলাকা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর তীরবর্তী এলাকায় নদীভাঙনের ঝুঁকি থাকার কারণে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় না। তবে বেড়িবাঁধের বাইরে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় এবং তা করা একান্ত প্রয়োজন। সুশীলন নামের এক বেসরকারি সংস্থা সম্প্রতি বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের নিয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা করেছে, সেখানে সবাই ওই ১২টি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের এ দাবি যুক্তিসংগত। ঝড়-বৃষ্টির মৌসুম আসতে আরও কিছু সময় বাকি রয়েছে, তাই এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষত নারী ও শিশুদের জন্য উপযোগী করে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে এই মানুষগুলোর জীবনের ঝুঁকি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।