চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

সম্পাদকীয়

করোনার কারণে গত বছরের মার্চে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২৭ জানুয়ারি। মেয়র পদে ৭ জন, ৪০টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭২ জন এবং ১৪টি সংরক্ষিত পদে ৫৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই নির্বাচনে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।

নির্বাচন হলে প্রচারণা হবে, আর প্রচারণা হলে লোকসমাগম হবে, তা স্বাভাবিক। কিন্তু করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি ও নির্বাচনী আইন মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব কার? নিশ্চয়ই নির্বাচন কমিশনের। প্রথম কথা হলো যেই করোনার প্রাদুর্ভাবের দোহাই দিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করেছিল, সেই করোনা কি দেশ থেকে চলে গেছে? যদি না গিয়ে থাকে, তাহলে করোনার মধ্যেও তারা নির্বাচন করছে কী যুক্তিতে?

নির্বাচন কমিশন থেকে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ ঘরে-বাইরে হরদম স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলেছে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে, এই আশা দুরাশাই বটে। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিনে প্রথম আলোয় যে ছবি ছাপা হয়েছে, তাতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী মিনি ট্রাকের বহর নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করছেন। তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা যে শুধু যানবাহনে ছিলেন তা-ই নয়, তাঁদের একাংশ গাড়িবহরের দুই পাশে দাঁড়িয়ে মেয়র প্রার্থীকে স্বাগত জানাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনও লোকজন নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তদুপরি দুই প্রার্থীর কর্মী–সমর্থকদের বেশির ভাগেরই মুখে মাস্ক ছিল না।

ভোটের নামে এভাবে সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলার অধিকার বা এখতিয়ার কে এম নূরুল হুদা কমিশনের নেই। যেখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন টিকা না আসা পর্যন্ত (কবে আসবে কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না) মুখে মাস্ক পরতে ও সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে সবাইকে। সরকারের পক্ষ থেকেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নো মাস্ক নো সার্ভিস। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ঢাকার পরই চট্টগ্রামে বেশি। নির্বাচন কমিশন হয়তো বললে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এই নির্বাচন করতে হচ্ছে। এটি জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয় নির্বাহী বিভাগের পরামর্শেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, প্রার্থীদের আচরণবিধি ও নির্বাচনী আইন মানাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরুতে তাঁরা কাজটি কেন করলেন না? মানুষ আইন ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করার পর মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে লাভ হবে না। কাজটি করতে হতো আগে থেকে।

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হোক, তা সবাই আশা করে। তারও চেয়ে আশা করে, নির্বাচনী প্রচার কিংবা ভোট অনুষ্ঠানের নামে মানুষকে যেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া না হয়। দেরিতে হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বোধোদয় ঘটুক। ভোট ও ভোটার দুই–ই বাঁচুক।