চালের মজুত তলানিতে কেন

খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১৩ বছরের মধ্যে সরকারি গুদামে চালের মজুত এখন সর্বনিম্ন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গুদামে চাল মজুত আছে ১৩ লাখ ১২ হাজার টন। অথচ সর্বনিম্ন ১৫ লাখ টন থাকা উচিত; কারণ, এর নিচে নামলেই বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। ২০০৮ সালে চালের মজুত কমে গিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টনে নামলে বাজার চড়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে চাল আমদানি নিয়ে সমস্যা হলেও মজুত এতটা কমেনি।

এবার চালের মজুত এতটা কমে যাওয়ার জন্য মূলত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভুল নীতি দায়ী। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ধানের উৎপাদন কম হয়। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী গত আগস্ট মাসে চাল আমদানির অনুমতি দেন। কিন্তু খাদ্য মন্ত্রণালয় আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করতে পাঁচ মাস সময় নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আমদানি শুরু হলেও প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা এল। আমদানি করা চালের বড় একটা অংশ আসার কথা ভারত থেকে। গত সোমবার থেকে দুই দেশের সব স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার কারণে।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ধানচাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। দাম ঠিক করা হয়েছে যথাক্রমে চাল প্রতি কেজি ৪০ ও ধান ২৭ টাকা। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ধান সাড়ে ৬ লাখ টন ও চাল সাড়ে ১১ লাখ টন। প্রতিবছরই রুটিনমাফিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু তা কখনোই পূরণ হয় না। গত বছর ১৬ দশমিক ৭০ লাখ টন বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু কেনা হলো মাত্র ৯ দশমিক ১০ লাখ টন। অন্যদিকে সাড়ে ৮ লাখ টন আমন ধান ও চালের বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ৮৮ হাজার টন।

সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যে পূরণ হবে, তার নিশ্চয়তা কী? আসলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নীতিমালা ঘোষণা এবং লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। আদৌ তা পূরণ হলো কি না, তা দেখার কেউ নেই। জবাবদিহি নেই।

করোনাকালে খাদ্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়ে চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। একদিকে তাঁদের আয় কমছে, অন্যদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। সংকট উত্তরণে সরকারের প্রথম করণীয় হলো বাজার স্থিতিশীল রাখতে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, বাজারের ওপর কঠোর নজরদারি, যাতে করোনার অজুহাতে মজুত বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন; তৃতীয়ত, ধানচাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে সরকারি গুদামে ন্যূনতম মজুত নিশ্চিত করা।

খাদ্যশস্য উৎপাদনের সঙ্গে খাদ্য মজুতের একটা যোগসূত্র আছে। কৃষি উৎপাদনের বিষয়টি দেখে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মজুত ও সরবরাহ দেখে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে খোদ কৃষিমন্ত্রী খাদ্য মজুতের বেহাল অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আবার খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা জবাব দিয়েছেন এবং তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সন্তুষ্ট হয়েছেন। এতে স্পষ্ট যে কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাজের সমন্বয় নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয় কী জবাব দিয়েছে, তা কৃষি মন্ত্রণালয় জানবে না কেন?

শেষ কথা হলো, সরকারি গুদামে তিন লাখ টন চাল কিংবা পাঁচ লাখ টন (গমসহ) খাদ্যশস্য থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অবিলম্বে মজুত বাড়াতে হবে, নইলে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাবে। চলমান মহামারিতে মানুষের আয়–রোজগার কমে গেছে, চালের দাম ইতিমধ্যেই বেড়েছে, আরও বাড়লে মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে। কিন্তু কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া চলবে না।