ছয় চিনিকল বন্ধ

সম্পাদকীয়

লোকসানের বোঝা কমাতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) যখন ছয়টি চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল, আখচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ রাখার প্রতিবাদে শ্রমিক-কর্মচারী ও চাষিরা বিক্ষোভ করেছেন। দাবি মানা না হলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

চিনিকল এলাকায় আখমাড়াই বন্ধ থাকার প্রতিবাদে জিল্লুর রহমান নামের এক চাষি যে তাঁর খেতের আখ পুড়িয়ে ফেলেছেন, সেই ছবিও প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। ওই চাষি যুক্তি দেখিয়েছেন, রংপুর চিনিকলের চেয়ে ছোট জয়পুরহাট চিনিকলে আখ দিতে গেলে জমিতেই আখ শুকিয়ে যাবে। ছয় মাসেও তাঁরা আখমাড়াই করতে পারবেন না। ফলে ধানের আবাদও করা সম্ভব হবে না। আখ পোড়ানোর খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার একদল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সোনাতলা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভায়।

এ ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে বন্ধ হওয়া মিল এলাকার আখচাষিরা কী ভয়ানক দুরবস্থার মধ্যে আছেন। এর দায় কোনোভাবে বিএসএফআইসি কিংবা সরকার এড়াতে পারে না। সরকার চিনিকল বন্ধ করে সেখানে কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর রুটি-রুজির পথই বন্ধ করেনি, সংশ্লিষ্ট এলাকার আখচাষিদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শ্রমিকেরা গত শনিবার মহিমাগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের সামনে গোবিন্দগঞ্জ-মহিমাগঞ্জ সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

চাষিরা আখ চাষ করেন মিলের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে। চাষি আখ চাষ করবেন আর চিনিকল সেই আখ মাড়াই করে চিনিকলে নিয়ে যাবে—এটাই চুক্তির শর্ত। এ ক্ষেত্রে আখচাষিরা চুক্তির শর্ত পূরণ করলেও বিএসএফআইসি কিংবা মিল কর্তৃপক্ষ শর্ত ভঙ্গ করেছে। অতএব, আখচাষিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া তাদের আইনত কর্তব্য।

সরকার লোকসানের দোহাই দিয়ে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এ লোকসানের জন্য শ্রমিক বা আখচাষিরা দায়ী নন। দায়ী সরকারের ভুল নীতি ও মাথাভারী প্রশাসন। নীতিনির্ধারকেরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলেন, চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন করে এর বহুমুখী উৎপাদনে যাবে, যাতে সেখানে চিনির পাশাপাশি উপজাত পণ্যও উৎপাদিত হবে। দর্শনা চিনিকল এ পদ্ধতিতে লাভজনক হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য চিনিকলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের এত বিলম্ব হলো কেন?

চিনিকলে নিয়োজিত শ্রমিক বাঁচুক, বাঁচুক আখচাষিরাও।