জুড়ীতে টিলা কেটে ঘর

২০১০ সালের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী, সরকারের অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন ও পাহাড়-টিলা কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ বালু উত্তোলন করলে কিংবা টিলা কাটলে দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু এ আইন যে কার্যকর হচ্ছে না, তার প্রমাণ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে বালু উত্তোলন ও টিলা কাটা চলছে। বিশেষ করে পাহাড়ের নিচের মাটি কিংবা গাছ কেটে নিলে পাহাড় পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়ছে।

মৌলভীবাজারের জুড়ীর প্রথম আলো প্রতিনিধির খবরে বলা হয়, জুড়ী উপজেলায় টিলা কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হলেও টিলা কাটা বন্ধ হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম ১৫–২০ দিন ধরে নিজের মালিকানাধীন প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার একটি টিলা কাটাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে টিলার প্রায় আট শতক জায়গা কেটে নিচে একটি পাকা বসতঘর নির্মাণ করা হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে রোববার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে অভিযান চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাটি কাটার কারণে টিলাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো সময় ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযানকালে টিলার মালিককে পাওয়া যায়নি।

এ ছাড়া রাধানগর, মোহাজিরাবাদ ও বিষামণি এলাকায় প্রভাবশালীরা টিলা-পাহাড় কেটে বসতবাড়ি, হোটেল-মোটেল, রিসোর্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ আছে। আবার অনেক এলাকায় পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের ছাতকে টিলা কেটে পাথর উত্তোলন করার সময় মাটি ধসে আবদুল মালিক (২৬) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। কয়েক বছর আগে জুড়ীতেও টিলা কাটার সময় এক শ্রমিক মারা যান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, পাহাড়-টিলা কাটা নিয়ে প্রভাবশালী মহল ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল দৌড় চলছে। যখন প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালান, তখন টিলা কাটা বন্ধ থাকে। আবার অভিযান শেষ হলে টিলা কাটা চলতে থাকে। নামকাওয়াস্তে অভিযান চালিয়ে পাহাড়-টিলা রক্ষা করা যাবে না।

এমনিতেই বাংলাদেশে পাহাড়-টিলার পরিমাণ কম। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলেই কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা আছে। প্রভাবশালীদের আগ্রাসনে সেসবও যদি ধ্বংস হয়ে যায়, বাংলাদেশ-পাহাড় টিলা শূন্য হয়ে পড়বে, যা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই দেশের পাহাড়-টিলা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।