জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’। টাকা তাঁর কাছে যে কতটা মূল্যহীন বস্তু তা বোঝাতে গিয়ে তিনি কথাটি বলেছিলেন। কিন্তু অনেকের কাছে, অন্তত ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় আমন ধান কাটা শেষ করেই আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া জমির মালিকদের কাছে ‘মাটিই টাকা, টাকাই মাটি’। মাটি বেচে ‘নগদ নারায়ণ’ পকেটস্থ করার মাধ্যমে তাঁরা সাময়িক লাভবান হলেও এতে যে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে এবং এতে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের ফসল যে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে, তা তাঁরা বুঝতে চাইছেন না। উপজেলার খনগাঁও, উত্তর গড়গাঁও, বৈরচুনা, মল্লিকপুর, নানুহর, ভেলাতৈড়, চাপোড়, সিন্দুর্না, দৌলতপুর ও সিরাইল গ্রামে বিভিন্ন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। আমন ধান কাটা শেষ হওয়ার পর থেকেই এসব জমিতে ৬-৭ ফুট গভীরতায় মাটি কাটা শুরু হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে উপজেলার ইটভাটার আশপাশের জমির উপরিভাগের মাটি কাটার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এতে ভূমির শ্রেণিই বদলে যাচ্ছে। একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী (দালাল) কৃষকদের সঙ্গে মাটির দরদাম করেন। পরে ওই মাটি তাঁরা বিক্রি করেন ইটভাটার মালিকের কাছে। এসব ব্যবসায়ী বছরের বিভিন্ন সময় কম মূল্যে বিঘা বা একর চুক্তিতে ফসলি জমির মাটি কিনে রাখেন। ভাটার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই খননযন্ত্রের সাহায্যে এসব মাটি কেটে তা বেশি মূল্যে ইটভাটায় সরবরাহ করেন। দেড় থেকে দুই মাস আগেই ভাটার মালিকেরা মাটি সংগ্রহ শুরু করেছেন। উপজেলার ৯৫-১১০ জন ব্যবসায়ী ভাটায় মাটি সরবরাহের কাজে জড়িত।

ফসলি জমির উপরিস্তরের ৭ থেকে ১০ ইঞ্চির মধ্যে জৈব উপাদান ও খাদ্য গুণাগুণ থাকে। তাই এ স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তরের মাটি সরানো হলে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। একবার ফসলি জমির মাটি কাটা হলে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে আট-নয় বছর লাগে। অর্থাৎ এতে দীর্ঘমেয়াদি ফসলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

মনে রাখা দরকার, ব্যক্তি জমির মালিক হলেও কোনো ব্যক্তি খেয়ালখুশি মতো তাঁর মালিকানাধীন জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না। এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সেই দিক মাথায় রেখে স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।