ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় ফেরা

ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে সারা দেশ থেকে মানুষ যখন ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে, তখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সরকার চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অর্থাৎ, ২৩ মে পর্যন্ত সরকারি বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ২৯ মে পর্যন্ত। প্রতিবেশী ভারতে মহামারির উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যথাযথ। কিন্তু কার্যত এই বিধিনিষেধের অর্থ কী, তা স্পষ্ট নয়।

কারণ, ‘বিধিনিষেধ’, যেটাকে জনগণ লকডাউন বলছে, তার এক নম্বর উদ্দেশ্য যদি হয় জনসমাগম, ভিড়ভাট্টা, জনসংস্পর্শ ইত্যাদি এড়িয়ে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব যতটা সম্ভব নিশ্চিত করা, তাহলে সেই উদ্দেশ্য অন্তত কিছু মাত্রায় অর্জনের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উচিত; শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করাই যথেষ্ট নয়। ঈদের আগে বিধিনিষেধ বহাল ছিল, কিন্তু ৬৫ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকা থেকে সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার সময় যে জনসংস্পর্শ ঘটেছে, তাতে ওই বিধিনিষেধের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়েছে। আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছিল, কিন্তু চালু রাখা হয়েছিল ফেরি চলাচল। ফলে ফেরিঘাট ও ফেরিগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষের গাদাগাদি-ভিড় হয়েছিল।

ঈদের পর মানুষের ঢাকায় ফিরে আসার ক্ষেত্রেও একই রকমের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মন্তব্য করেছেন, ‘লকডাউনের’ মধ্যে ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দলে দলে বাড়ি গেছে, তারা একইভাবে ফিরে এলে তার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঈদের পর শহরমুখী জনস্রোত ‘উদ্বেগের’ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এই উদ্বেগ প্রকাশ যথার্থ, কিন্তু উদ্বেগ নিরসনের জন্য, সংক্রমণের ঝুঁকি দূর করার জন্য বা অন্ততপক্ষে ঝুঁকি কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলো না কেন—এই প্রশ্নও তাঁদের তোলা উচিত। ঈদের আগে ও পরে গ্রামমুখী ও শহরমুখী জনস্রোত আমাদের কোনো নতুন অভিজ্ঞতা নয়। এই করোনা মহামারির মধ্যেই আমরা গত বছর দুটি ঈদ পার করেছি এবং উভয় ঈদের পরেই সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছিল, তা লক্ষ করেছি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কোনো শিক্ষা নিইনি।

সরকারি নীতিনির্ধারক মহল যদি ঈদুল ফিতরের আগে-পরের এই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে অনিবার্য ভেবে শুধু প্রজ্ঞাপন জারি ও কাগজ-কলমের আদেশ-নিষেধের মধ্যেই সরকারি কর্তব্য সীমাবদ্ধ রাখে, তাহলে জাতির সামনে বেশ বড় বিপদ অপেক্ষমাণ। সে জন্য এখন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক পর্যায়ে দায়িত্বশীলতা খুব বেশি প্রয়োজন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ মাত্রায় সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও ঢুকে পড়েছে, এটির সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি; তাই প্রথমত নিজের সুরক্ষার স্বার্থেই স্বাস্থ্যবিধির সব নিয়ম অত্যন্ত কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে, যার ফলে অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।