ঝুঁকিতে বংশী নদীর সেতু

সরকারের উন্নয়নকাজের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অদক্ষতা ও জবাবদিহিহীনতার এক নজির হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ধামরাইয়ের বংশী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাহিনি। এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। নানা জটিলতার পর্ব পার হয়ে সেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে সেই সেতুর নিচ থেকে, যা নতুন এ সেতুকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।

যে সেতুটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সালে, তা শেষ করতে ২০২১ সাল হয়েছে। এর মধ্যে তিন দফা ঠিকাদার বদল করতে হয়েছে। কারণ, কাজ শুরু করে ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে দফায় দফায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হয়েছে। প্রথম দুই দফায় যে দুই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ পেয়েছিল তারা যদি যোগ্য হতো, তবে এমন হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, যাঁরা তাদের কাজ দিয়েছিলেন, তাঁরা কিসের ভিত্তিতে এ দুই প্রতিষ্ঠান দুটিকে কাজ দিয়েছিলেন?

যেকোনো নির্মাণকাজে বিলম্ব মানেই অর্থের অপচয় আর খরচ বেড়ে যাওয়া। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ৭৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতুর নির্মাণকাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি—এর জবাবদিহি করবে কে? দুই অযোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার দায় কি কেউ নিয়েছে? এর জন্য কারও শাস্তি হয়েছে? ধামরাই উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে এর কোনো জবাব নেই।

শেষ পর্যন্ত তৃতীয় যে প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ শেষ করার দায়িত্ব পেয়েছে, এখন দেখা যাচ্ছে তারাও নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলছে। তাদের সঙ্গে শর্ত ছিল সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে দেওয়ার। প্রথম আলোর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সেতুর নিচে বংশী নদী থেকে মাটি কাটার ফলে সেতুর পিলার ঘেঁষে গভীর খাদ তৈরি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা দায়িত্বজ্ঞানহীন। প্রকৌশলী একবার বলেছেন, অনুমতি ছাড়া নদীর মাটি কাটা হলে ঠিকাদার অন্যায় করেছেন, আবার বলেছেন, সেতুর নিচ থেকে মাটি কাটলে পিলারের ক্ষতি হবে না। আর ইউএনও বলেছেন, তিনি ‘খোঁজখবর নিয়ে’ ব্যবস্থা নেবেন। প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কবে ব্যবস্থা নেবেন? সর্বনাশ হওয়ার পর?

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন, উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ঠিকাদার এ কাজ করছেন। পুরো বিষয়টির তদন্ত হওয়া জরুরি।