টিকাদানে অগ্রগতি

সম্পাদকীয়

৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত যা লক্ষ করা গেল, তা এককথায় উৎসাহব্যঞ্জক। প্রথমত, এই টিকা সম্পর্কে প্রাথমিক সংশয় বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে গিয়ে টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। এটা প্রতীয়মান হচ্ছে টিকা গ্রহণকারী এবং গ্রহণের জন্য নিবন্ধনকারীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা থেকে। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি এক দিনের ব্যবধানে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। মাঝখানে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দুই দিন টিকাদান কম থাকার পর তা আবার বেড়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সারা দেশে ২ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ ব্যক্তি টিকা নিয়েছেন। ওই দিন দুপুর পর্যন্ত টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯৮ জন।

এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমরা যতটা জানতে পেরেছি, টিকাদানের কাজটি সুশৃঙ্খলভাবেই চলছে। তাৎক্ষণিক নিবন্ধন বন্ধ করার পর টিকাদান কর্মসূচিতে শৃঙ্খলা বেড়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধের এই টিকা পর্বকে সাফল্যমণ্ডিত করতে হলে জনগণের পক্ষ থেকে এমন উৎসাহব্যঞ্জক সাড়া অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া যে সর্বজনীন অধিকারের বিষয় এবং সরকার যে সেই অধিকার শতভাগ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চলমান টিকাদান কর্মসূচি এই মুহূর্তে যে পর্যায়ে আছে, সেখানে এর কেন্দ্রে রয়েছেন ১৫টি পেশাভিত্তিক তালিকার মানুষ এবং শিক্ষিত ও সচ্ছল মানুষেরা। শহরাঞ্চলের বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের বিপুল জনগোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এর বাইরে রয়েছে। এর কারণ, টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধনের ব্যবস্থাটি ইন্টারনেটভিত্তিক, যা ডিজিটাল যন্ত্র ও ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া সম্ভব নয়। গ্রামাঞ্চলে এর জন্য ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো থেকে সহায়তার ব্যবস্থা সীমিত মাত্রায় হলেও আছে, কিন্তু শহরাঞ্চলের বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যাঁরা প্রযুক্তিগত সুবিধার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের নিবন্ধনের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।

বর্তমানে নির্ধারিত ৪০ বছর এবং তার বেশি বয়সী মানুষদের সবার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নিবন্ধনের বর্তমান পদ্ধতিটির সীমাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। কেননা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলে টিকার জন্য নিবন্ধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনগুলোর। কিন্তু সিটি করপোরেশনগুলো এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের কাজ শুরুই করতে পারেনি, তারা প্রস্তুতি পর্বে রয়েছে। আমরা মনে করি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর ওয়ার্ডভিত্তিক উদ্যোগ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা হলে নিবন্ধনের কাজটি তেমন জটিল কিছু নয়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি স্থাপন করে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে কাজটি দ্রুতই সম্পন্ন করা সম্ভব। অবশ্য এ জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করতে সক্ষম লোকবলের ব্যবস্থা করতে হবে। আর প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞানহীন ও প্রযুক্তির সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। যত দূর জানা গেছে, এই জনগোষ্ঠী টিকাপ্রাপ্তির আওতায় কতটা এসেছে বা আসেনি, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থাও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।

টিকাপ্রাপ্তির সর্বজনীন অধিকার বাস্তবায়নের জন্য এই শহর-গ্রাম উভয় অঞ্চলে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এই অসম্পূর্ণতা দূর করার পদক্ষেপ অবশ্যই দ্রুত নিতে হবে।