ঠিকাদারির অনিয়ম

বেলটিয়া বাজার-পুলিশ লাইনস জামালপুরের পুরোনো একটি সড়ক। পুলিশ লাইনস এই সড়কেই পড়েছে। পুলিশ ছাড়াও অন্তত হাজার পাঁচেক মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে এত দিন পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কোনো নালা না থাকায় সড়কটি বেশির ভাগই জলাবদ্ধ থাকে। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। এই সড়কেরই দুই পাশে ৯২০ মিটার করে পাকা নালা নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দও করেছে তারা। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাম কনস্ট্রাকশন-সাম ইঞ্জিনিয়ারিং (জেবি)। স্থানীয়ভাবে কাজটি তদারক করছেন এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন।

২০২০ সালের মার্চ থেকে তারা কাজও শুরু করে দিয়েছে। সত্যি বলতে কি, নালার কাজ অনেকটা হয়েও গেছে। ৪ মে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই নালাই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র। কেন?

কারণ কাজের মান। কিন্তু কাজের মান দেখভালের দায়িত্ব তো প্রকৌশলীর, তিনি কী করছিলেন? তাঁর দাবি, শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের শর্ত মানছিল না। ঢালাইয়ের কাজ প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে করার কথা। অথচ তাঁকে না জানিয়ে রাতারাতি ঢালাই করা হয়েছে। এসব অনিয়ম বন্ধে প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তারপরও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে তারা। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ২৯ এপ্রিল কাজ বন্ধ করে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। নালার যে অংশ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটুকু ভেঙে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী করার জন্য তাদের সময় বেঁধে দেয় তারা। সেই নির্দেশও না মানায় গত মঙ্গলবার বুলডোজার দিয়ে প্রায় ১৫০ মিটার নালা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

আমাদের প্রশ্ন, ত্রুটি নির্দেশ করার পরও কেন তারা তা সংশোধন করল না? তাদের কোনো আপত্তি থাকলে কেন তারা জানাল না? লিখিত অভিযোগের জবাব কেন তারা দিল না? তারপরও কেন তারা কাজ চালিয়ে গেল? এসবই অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়ার যে সংস্কৃতি; কঠোর শাস্তি ছাড়া তা বন্ধ হবে না।

সারা দেশের অধিকাংশ ঠিকাদারি কাজেরই কমবেশি এই চিত্র। প্রকৌশলী ও মেয়রের আপত্তির মুখে জামালপুরের বিষয়টা সর্বসমক্ষে এসেছে, অন্যত্র হয়তো টাকাপয়সা দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হতো। নিম্নমানের বা অপ্রতুল সামগ্রী দিয়ে বানানো এই নালা হয়তো কয়েক দিন পরই ভেঙে পড়ত, আবার জলাবদ্ধ হতো রাস্তা, প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ত হাজারো স্থানীয় মানুষ। কিন্তু তাদের ভোগান্তি নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় কি প্রশাসনের মাথাদের আছে?