ঠিকাদারির গাফিলতির সাজা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

‘উন্নয়ন ও দুর্নীতি মাসতুতো ভাই’ ধারণাটি যখন সমাজে অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা পায়, তখন সরকারি প্রকল্পের করুণাধারা প্রশাসনিক আলস্য-দুর্নীতির মরুপথে গড়াতে গড়াতে শুকিয়ে যায়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করা এবং প্রকল্পের মেয়াদ ও প্রকল্প ব্যয়ের অঙ্ক টেনে চুইংগামের মতো লম্বা করা তখন ঠিকাদারদের সহজাত অভিলাষ হয়ে ওঠে। মাঝখান থেকে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ।

সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন অগণিত চিত্রের মধ্যে সুনামগঞ্জে ‘হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ নির্মাণ প্রকল্পের চিত্রটি বৃহত্তর পরিসরের পর্যালোচনার দাবি রাখে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাওর-অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় মৎস্যজীবী ও মাছ ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকায় সুরমা নদীর তীরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড। কথা ছিল কাজ শেষ হবে পাঁচ মাসের মধ্যে। সেই কাজ বারবার সময় বাড়িয়ে তিন বছরে এনেও তারা শেষ করতে পারেনি। কাজ হয়েছে অর্ধেক। আর নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ গেছে অনেকবার। শেষ পর্যন্ত নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রশাসন নির্মাণকাজ গত এপ্রিল মাসে বন্ধ করে দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, অনিয়ম হয়নি, চলতি জুন মাস পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময় আছে।

অর্ধেক কাজ শেষ করতে যেখানে তিন বছর লেগে গেছে, আগামী ১৫ দিনে সেই কাজ যে শেষ হবে না, তা সহজেই বোধগম্য। কিন্তু অবতরণ কেন্দ্রের জন্য সরকারের তথা জনগণের যে অর্থের অপব্যয় হলো, হাজার হাজার মৎস্যজীবী যে উপকার থেকে বঞ্চিত হলেন, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে? যেসব ঠিকাদার এ ধরনের জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন কাজকে একান্ত ব্যক্তিস্বার্থে অবলীলায় উপেক্ষার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেন, তাঁদের বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতেই হবে। ‘হোক উন্নয়ন, হোক দুর্নীতি’ স্লোগানের মাহাত্ম্য যদি সেই অবশ্যকরণীয়কে ছাপিয়ে যায়, তাহলে সরকারের সব সাফল্য সেই স্লোগানের তোড়ে ভেসে যাবে, সন্দেহ নেই।