তবু সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠাব?

সৌদি আরবে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অতি পুরোনো। দালালদের প্রতারণায় সর্বস্বান্ত নারীদের বন্দিদশা, প্রাণ হাতে করে পালিয়ে স্বদেশে ফেরা ইত্যাদি অভিযোগেরও প্রতিকার হয়নি। শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনাও প্রতিকারহীনভাবে বেড়ে চলেছে। সৌদি আরবে কর্মরত আমাদের নারী গৃহকর্মীদের মধ্যে ধর্ষণের ঝুঁকি প্রকট, তাঁদের মধ্যে ধর্ষণ-আতঙ্ক একটা সাধারণ বিষয়। এভাবে অন্তত ২২ জন নারী গৃহকর্মী মারা গেছেন। অনেকে অপমান-নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। সরকারি উদ্যোগে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন প্রায় দেড় হাজার। পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে তাঁরা এক দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হয়েছেন।

নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ নানা ধরনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের সঙ্গে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি করেছে এবং তারপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ নারী গৃহকর্মী সৌদি আরবে গেছেন। কিন্তু সৌদি আরবে আমাদের দূতাবাস ও কনস্যুলেট সূত্র বলছে, এ দুই বছরে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। যে চুক্তি করা হয়েছে, তাতে নারী গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়গুলোর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি। কেউ কেউ বলেন, চুক্তিটি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে।

বিস্ময়কর তথ্য হলো, আমাদের নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চাওয়া হয়নি। দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ কারিগরি কমিটিতে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার কথা, কিন্তু এখনো তা করা হয়নি। দেড় লাখ নারীর জন্য অত্যন্ত বিরূপ ও সব বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ একটা কর্মপরিবেশে তাঁদের স্বাভাবিক মানবিক ও শ্রমিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সৌদি আরবে আমাদের নারী গৃহকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সৌদি কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ওই দেশে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।