তারাগঞ্জের আলুচাষি

সম্পাদকীয়

রংপুরের তারাগঞ্জের চাষিরা তামাকের বদলে আলু চাষ করেছেন, এটি খুবই ভালো খবর। গ্রামাঞ্চলের এই প্রান্তিক চাষিরাও জানেন তামাক ক্ষতিকর ও আলু উপকারী। এ কারণেই বিকল্প থাকলে তাঁরা তামাক চাষ করেন না। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয় রংপুরে।

অনেক দুঃসংবাদের মধ্যে প্রথম আলোর তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি আশার খবর শোনালেন যে এবার আলুর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। ভালো দাম থাকায় হিমাগারের মালিকেরা খেত থেকেই চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে নিচ্ছেন এবং তাঁদের ঋণও দিচ্ছেন। এবার তারাগঞ্জে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় অনেক চাষি এবার তামাকের পরিবর্তে আলুর চাষ করেছেন। এ কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৬৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।

কয়েকজন আলুচাষি ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক বেশি। খেতেই প্রতি কেজি গ্রানুলা (সাদা) জাতের আলু ১০-১১ টাকা, কার্ডিনাল, এস্টারিক্স (লাল) জাতের আলু ১২-১৩ টাকা, শিলবিলাতি, ঝাউ, এন্দুরকানি আলু ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুচাষিদের জন্য এটি সুসংবাদ।

অনেক প্রান্তিক চাষিরই চাষ করার মতো পুঁজি থাকে না। ফলে মহাজনদের কাছ থেকে তাঁরা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁরা যদি হিমাগারের মালিকদের কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ পান, তাতে উভয়ের লাভ। আলু চাষ হলেই তো হিমাগার কাজে লাগবে। চাষ না হলে হিমাগারের মালিকেরও ক্ষতি। একটি হিমাগারের ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, এবার চাষিদের হিমাগারে আলু রাখার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। আলু নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঋণও দেওয়া হচ্ছে।

গত বছরের শেষের দিকে আলুর দাম বেশি থাকায় এবার অনেক চাষি তামাক ছেড়ে আলু চাষে ফিরেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। এ ধারা ধরে রাখতে হলে কৃষি বিভাগের উচিত চাষিদের আলুর দাম নিশ্চিত করা। কৃষক ভালো দাম পেলে আলু চাষে আরও উৎসাহিত হবেন।

আমাদের কৃষিপণ্যের বিপণনব্যবস্থা দুর্বল। আলুসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য সমবায় পদ্ধতিতে আদর্শ বাজার স্থাপন করতে হবে, যাতে উৎপাদক সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারবেন। প্রতি গ্রামে না হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষিপণ্যের আলাদা বাজার তৈরি করা যেতে পারে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু যেহেতু বিদেশেও রপ্তানি হয়, সেহেতু এর ভালো দাম না পাওয়ারও কোনো কারণ দেখি না।