দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণিসম্পদ বিভাগ

সম্পাদকীয়

সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের স্লোগান হলো, ‘বাড়াব প্রাণিজ আমিষ গড়ব দেশ, স্বাস্থ্য মেধা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’। কিন্তু তাদের নীতি-পরিকল্পনায় এর যথাযথ প্রতিফলন আছে বলে প্রতীয়মান হয় না। প্রাণিজ সম্পদ বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলার যে চিত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এ থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, অন্যান্য এলাকার চিত্রও কমবেশি একই রকম হবে।

যেকোনো সরকারি দপ্তর বা বিভাগের কাজ চালানোর জন্য অবকাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লোকবল থাকা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী সরকার পদও সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগের অধীনে বরিশাল বিভাগের জন্য নির্ধারিত পদের অর্ধেকের কাছাকাছি পদই খালি। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ বিভাগের ৬ জেলা ও ৪২টি উপজেলায় ৫২২টি পদের বিপরীতে ২২১টি পদই শূন্য। কর্মরত আছেন ৩০১ জন। এ অবস্থায় সেবাপ্রার্থীরা সেবা পাবেন কীভাবে?

প্রতিটি জেলায় একটি গবাদিপশু হাসপাতাল ও প্রতিটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের অন্তত দুজন কর্মকর্তা থাকার কথা। অথচ বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ উপজেলায় আছেন একজন কর্মকর্তা। অন্যদিকে হাসপাতালে ভেটেরিনারি চিকিৎসকেরও স্বল্পতা আছে, ঘাটতি আছে প্রয়োজনীয় ওষুধেরও। অভিযোগ আছে, ভেটেরিনারি চিকিৎসকেরা বড় খামারে যেতে আগ্রহ দেখান না। বাধ্য হয়ে খামারিরা স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। বরগুনার খাজুরতলা গ্রামের একজন কৃষক জানিয়েছেন, তাঁর ৪৫টি গরু থেকে প্রতিদিন ২৫০ কেজি দুধ উৎপাদিত হয়। কিন্তু তিনি প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও কোনো সহায়তা পাননি। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে গবাদিপশুর রোগবালাই বেড়ে চলেছে।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গরু উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে ১ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি হয়। কিন্তু ২০১৯ সালে উৎপাদন কমে যায় সহযোগিতা না পাওয়ায়। একইভাবে ২০১৭ সালে দুধ উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে উৎপাদন ৬ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছালেও ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে।

যেখানে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমিষের চাহিদা অনেক গুণ বেড়েছে, সেখানে গবাদিপশু ও দুধের উৎপাদন কমে যাওয়া উদ্বেগের খবরই বটে। গবাদিপশু পালনের মূল কাজটি কৃষক করলেও সরকারের সহায়তা জরুরি।

দক্ষিণাঞ্চলসহ সব জেলা ও উপজেলায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের শূন্য পদগুলো অবিলম্বে পূরণ করা হোক।