দুই সাংসদের কাণ্ড

সম্পাদকীয়

গত রোববার বিএনপিদলীয় সাংসদ জি এম সিরাজ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তৃতা দিতে গিয়ে ডজনখানেক সাংসদের দখল, দুর্নীতি ও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ার যে অভিযোগ এনেছেন, তার সত্যাসত্য বিচারের দায়িত্ব সরকারের। তবে দুজন সাংসদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ওই পদে তাঁদের থাকার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

এই দুই সাংসদের একজন হলেন লক্ষ্মীপুর–২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মো. শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুল এবং যশোর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ শাহীন চাকলাদার। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে সাংসদ শহিদ ইসলাম কুয়েতের কারাগারে দণ্ডিত হয়েছেন। আদালত তাঁকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ৫৩ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন। মুদ্রা পাচারের আরও একটি মামলা বিচারাধীন আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কোনো সাংসদের বিদেশি আদালতে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এটি দেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

অন্যদিকে শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও খুবই গুরুতর। সেখানে এক ইটভাটার ব্যবসায়ীকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য তিনি কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিবেশকর্মী সাইফুল্লাহর নামে মিথ্যা মামলা করার নির্দেশ দেন। ওসি যখন ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ আছে বলে জানান, তখন সাংসদ কাউকে দিয়ে থানায় বোমা মেরে ওই পরিবেশকর্মীকে ফাঁসানোর নির্দেশ দেন।

একজন সাংসদ, যাঁর দায়িত্ব আইন প্রণয়ন করা, তিনি কেবল আইন লঙ্ঘন নয়, একজন পরিবেশকর্মীকে ফাঁসাতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে বলেছেন! এমনকি তাঁকে হাইকোর্টের দোহাই দেওয়া হলে তাঁর সাফ জবাব ছিল ‘কোর্ট–ফোর্ট’ যা বলে বলুক তাঁর কথাই শুনতে হবে।

সংবিধানের ৬৬(১)-এর ঘ উপধারায় আছে, ‘কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হইবার বা সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তিলাভের পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’ শহিদ ইসলাম বিদেশি কারাগারে চার বছরের জন্য দণ্ডিত হয়েছেন এবং তিনি সেই দেশের কারাগারে দণ্ড ভোগ করছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদে থাকার যোগ্যতা থাকার কথা নয়।

শাহীন চাকলাদার উচ্চ আদালতকে অগ্রাহ্য করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করেছেন, যা ফৌজদারি অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে আইনপ্রণেতা হিসেবে অযোগ্য করেননি, মহান জাতীয় সংসদকেও হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। কোনো নাগরিক তিনি যেই পদ বা অবস্থানে থাকুন না কেন, সংসদের মর্যাদাহানি করলে বিশেষ অধিকারসংক্রান্ত কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এই সরকারের আমলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে বিরোধী দলের বহু নেতা-নেত্রীর নামে গায়েবি মামলা হয়েছে। আমরা সব ধরনের গায়েবি মামলার বিরোধিতা করি। কিন্তু প্রকাশ্যে এভাবে হুমকি দেওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কিংবা জাতীয় সংসদের মর্যাদা রক্ষা করতে হলে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। ব্যক্তির অন্যায় ও অপকর্মের দায় কেন জাতীয় সংসদের মতো মহান প্রতিষ্ঠান নেবে?