দ্রুত সি-ট্রাক চালু করে দুর্ভোগ মেটান

সম্পাদকীয়

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা মনপুরা দ্বীপের নাম কে শোনেনি। সেখানকার প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধের আকর্ষণে ছুটে যান অনেকে। কিন্তু দ্বীপটির দেড় লাখ মানুষ রীতিমতো বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সড়কপথে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপটির কোনো সংযোগ নেই। দ্বীপটির চারপাশেই মেঘনা। জেলা শহর ভোলার সঙ্গে দূরত্বও ৮০ কিলোমিটার। তজুমদ্দিন-মনপুরা নৌপথেই সহজে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে মনপুরাবাসীর যোগাযোগ ঘটে। সেই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সি-ট্রাকটি প্রায় ছয় মাস হলো অকেজো হয়ে আছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়া ও বিপজ্জনক জলসীমার মধ্যে অবৈধ নৌযানে করে জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌপথে সি-ট্রাকই হচ্ছে একমাত্র বৈধ নৌযান। মেরামতের জন্য ছয় মাস আগে নারায়ণগঞ্জে পাঠানো হয়েছে সেটি। অন্যদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জানাচ্ছে, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর—এই আট মাস সাগর মোহনার নদীগুলো সাগরের মতো বিপজ্জনক জলসীমায় পরিণত হয়। এ সময় সি-ট্রাক ছাড়া অন্য নৌযান চলাচল নিষেধ করা হয়। তার মানে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ নৌযানে চলাচল করার জন্য একপ্রকার বাধ্যই করা হচ্ছে মানুষকে।

অনিরাপদ যাতায়াতের কারণে মনপুরা থেকে বের হওয়ার নাম করলে অনেকে উত্তাল ঢেউয়ের আশঙ্কায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ছোট ট্রলারে যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের মালবাহী ট্রলার ডুবে যাচ্ছে। জরুরি চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী নৌযানেই মারা যাচ্ছে। ভোগান্তির এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন মনপুরার হাজিরহাটের ইউপি চেয়ারম্যান মো. নিজামউদ্দীন। ছয় মাস ধরে প্রতিদিন এত সব মানুষের দুর্ভোগের দায় কি বিআইডব্লিউটিএর ওপর বর্তায় না? স্থানীয় প্রশাসনও কীভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকে?

প্রথম আলোর প্রতিবেদক জানালেন, মালবাহী ট্রলারে করে মানুষ চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। অবৈধ স্পিডবোটের দৌরাত্ম্যও বেড়ে গিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মূলত সি-ট্রাকের ইজারা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও ইজারাদারের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব আছে। ইজারাদারকে সি-ট্রাক বুঝিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের গড়িমসি আছে। অন্যদিকে জাহাজ বুঝে না নেওয়ার জন্য ইজারাদারের ওপরই দোষ চাপাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। ফলে সি-ট্রাকটি নারায়ণগঞ্জেই পড়ে আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, পুরোনো সি-ট্রাকটি বারবার বিকল হয়ে যায়। নতুন একটি সি-ট্রাক দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সি-ট্রাকের অভাবে তাঁর দপ্তরের কর্মকর্তাসহ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এখন আরও কয়েক মাস যাওয়ার পর সেই সি-ট্রাক পাওয়া যাবে? এর মধ্যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে?