ধরমপাশায় কর্মসংস্থানে গাফিলতি

সম্পাদকীয়

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে মূলত কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে। কাজ না পেলে উপার্জন হয় না, আর উপার্জন না হলে খাবার মেলে না। এ রকম দুর্দশা থেকে অতিদরিদ্র মানুষকে রক্ষার উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার ২৬টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথম পর্যায়ে যে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তার সদ্ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত সময় আগামীকালই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সরকারি নির্দেশনা ছিল, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে শুরু করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে হবে।

প্রকল্পের কাজ হলো গ্রামীণ কাঁচা রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামতের জন্য মাটি কাটা। নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি কাটার বিনিময়ে প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা পাবেন। এ রকম ১ হাজার ৫১০ জন শ্রমিকের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি অতি নগণ্য। এটুকু অর্থের বিনিময়ে কাজ করার জন্য যাঁদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা অতিদরিদ্র এবং শ্রমিক হিসেবে অদক্ষ। এ কর্মসূচি আসলে তাঁদের জীবনধারণে সরকারি সহায়তার সীমিত প্রয়াস। তবু কাজের অভাবে অনাহার-অপুষ্টির শিকার হওয়ার চেয়ে যৎসামান্য মজুরিতেই তাঁরা কাজ করতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছেন। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে প্রকল্পগুলো অনুমোদন পায়নি। ফলে ২৬টি প্রকল্পের কোনোটিতেই কাজ শুরু হয়নি। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমাই পেরিয়ে যাচ্ছে। যেসব হতদরিদ্র মানুষ এই কাজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাহলে কি এখন প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ টাকা ফিরে যাবে? তাঁরা কোনো কাজই পাবেন না?

প্রকল্পগুলো জেলা পর্যায়ের অনুমোদন না পাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে উপজেলা কমিটি প্রকল্পগুলোর প্রস্তাব জেলা কমিটির কাছে পাঠাতে দেরি করেছে। আবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেছেন, হাওর এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে দেরি হওয়া এবং আরও নানা কারণে প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। কিন্তু ওই এলাকার অধিবাসীদের বক্তব্য হলো পানি নেমে গেছে, এখন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ করা অবশ্যই সম্ভব। আমরা মনে করি, প্রকল্পগুলো অনুমোদিত না হওয়ার প্রকৃত কারণ কী, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আর যেহেতু এখনো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে, তাই সময়সীমা বাড়িয়ে শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। সরকার যে উদ্দেশ্যে কর্মসূচিটি হাতে নিয়েছে এবং এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে, তা হলো অতিদরিদ্র মানুষের জীবনধারণে সহযোগিতা করা। সেই উদ্দেশ্য পূরণ করাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।