ধুনটে নতুন চরে ভাঙন

সম্পাদকীয়

একটার পর একটা ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একটার পর একটা মাটির চাঙড় ভেঙে পড়ছে নদীতে। একটু একটু করে চোখের সামনে নদীগর্ভে হারাচ্ছে চৌদ্দ পুরুষের ভিটা। এমন দৃশ্য যমুনাপারের বহু বাসিন্দাকে দেখতে হয়েছে, এখনো দেখতে হয়। চোখের সামনে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে যায়। নদী শিকস্তি এই মানুষগুলোর অনেকেই সব হারানোর পরও এলাকা ছেড়ে চলে যান না। একটু দূরে গিয়ে বসত পাতেন এই আশায় যে একদিন আবার সেখানে চর জাগবে। আবার ফিরে পাওয়া যাবে তিন পুরুষের ভিটে।

নদী হয়তো কখনো কখনো আবার সত্যিই সেই জমি ফিরিয়ে দেয়। সেখানে নতুন চর জাগে। নদী শিকস্তিরা ফের ফিরে আসেন নদী পয়স্তি হয়ে। কিন্তু প্রকৃতির ফিরিয়ে দেওয়া সেই ভিটে যদি দু-চারজন প্রভাবশালী বালুখেকোর লোভের কারণে আবার হারিয়ে যায়, তখন সেই কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে।

ঠিক সেই ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নে। সেখানে ভাঙনের কবলে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর। আশা ছিল, চর জেগে উঠলে আবারও বাপ-দাদার বসতভিটায় ফিরে যাবেন তাঁরা। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবাধে বালু তোলার কারণে তাঁদের সেই স্বপ্ন নষ্ট হতে চলেছে। নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে জেগে ওঠা চরে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি ও বসতভিটা ইতিমধ্যে যমুনায় বিলীন হয়েছে। ভাঙনকবলিত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে। তবে আশার বিষয়, সেখানে বৈশাখী চর ও রাধানগর চর নামের দুটি চরে মানুষ ঘরবাড়ি তুলেছে। কিন্তু এই দুটি চর এবং বথুয়ারভিটা চর নামের আরেকটি চরের ফসলি জমি থেকে স্থানীয় একদল ব্যক্তি বালু তুলছেন। খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলে তাঁরা বিক্রি করছেন। তাঁরা সবাই রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী। বালু তোলার কারণে এসব চরে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে।

যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রভাব–প্রতিপত্তি দেখিয়ে এসব বালু তোলা হচ্ছে। এঁদের থামাতেই হবে। দু–চারজনের অতি লোভের কারণে অসহায় মানুষের স্বপ্ন নষ্ট হতে পারে না।