নতুন জায়গা খুঁজে বের করুন

সম্পাদকীয়

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ঘর দেওয়ার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। বিভিন্ন স্থানে হতদরিদ্র মানুষ ঘর পেয়ে খুশিও হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের খামখেয়ালির কারণে প্রকল্পটি বিতর্কিত হয়ে পড়েছে।

প্রথম আলোয় মাদারীপুর প্রতিনিধির খবর থেকে জানা যায়, জেলার রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের ‘সেনখাল’ নামের একটি খালের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খাল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হলে অন্তত ৩০০ বিঘা ফসলি জমি জলাবদ্ধতার শিকার হবে। তাঁরা খাল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করার জন্য ৮ জুন জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে বলা হয়, ৭২ নম্বর সিরাজকাঠি পাবনীয়া মৌজায় আরএস ও বিআরএস দাগ নম্বর ৬৬৫ ও ৮২৯ নকশায় খালের জমি। খালটি কৃষিকাজে সেচ, দেশীয় মাছের উৎস, পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ, বর্ষার পানিনিষ্কাশন, কৃষিপণ্য পরিবহনসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। খালটির পাশ দিয়ে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ খরা মৌসুমে খালের পানির ওপর নির্ভরশীল। খাল ভরাটের ফলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বিরোধ এসে পড়েছে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পেও। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগে দুটি গ্রুপ—একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, অপরটির দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শাজাহান খানের অনুসারী আমগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কৃতিত্ব জাহির করতে নিজ এলাকায় খাল ভরাট করে আশ্রয়ণ প্রকল্প করছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেনখালের উভয় পাড় দিয়ে চলাচলের জন্য রয়েছে একটি কাঁচা রাস্তা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্ধারিত জায়গায় চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এ জন্য খালের মধ্যে দেওয়া হয়েছে একাধিক বাঁধ। স্থানীয় এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। জমি চাষ কইরা যা পাই, তা-ই খাই। খাল ভরাট হয়ে গেলে আমরা না খেয়ে মারা যামু। আমাগো সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। কয়েক পরিবারের জন্য আমরা ফসল ফলাতে পারব না, আমাগো রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে।’

সরকার গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু তা খাল ভরাট করে কিংবা ফসলি জমি নষ্ট করে হতে পারে না। ৩৫ জন গৃহহীনকে ঘর দেওয়ার জন্য যদি ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই প্রকল্প করে কী লাভ? এ ব্যাপারে রাজৈর উপজেলার ইউএনও ‘খালটি মৃতপ্রায়’ বলে যে সাফাই গেয়েছেন, তা–ও অগ্রহণযোগ্য। ইউএনওর দায়িত্ব মৃতপ্রায় খালটির শেষকৃত্য করা নয়; বরং খালটি যাতে পুনরুজ্জীবিত হয়, এলাকার মানুষ চাষবাস করতে পারে, সেই পদক্ষেপ নেওয়া। অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হোক।