নতুন ভবন পড়ে আছে

চিকিৎসক, নার্স, শয্যা, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি—কোনো কিছুর সংস্থান না করেই ১০০ শয্যার হাসপাতালকে কাগজে–কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল বানিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ ২৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সবচেয়ে আগে যা দরকার, সেই ভবন নির্মিত হয়ে আছে চার বছর আগেই।

এটি হবিগঞ্জের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বর্তমান চিত্র। সেখানে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের উপযোগী আটতলা ভবন নির্মাণ করে চার বছর বলা যায় ফেলে রাখা হয়েছে। একটি হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করার জন্য সবচেয়ে আগে দরকার হয় ভবন বা পরিকাঠামো। ভবন বানানো হয়ে গেলে চিকিৎসক নিয়োগ ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপনে তুলনামূলক কম বেগ পেতে হয়।

কিন্তু এখানে এত বড় ভবন বানানোর পরও শয্যা স্থাপন করা হয়নি। কেনা হয়নি কোনো চিকিৎসা সরঞ্জাম। বর্তমানে পুরোনো ১০০ শয্যার হাসপাতাল ভবনেই চলছে সব কার্যক্রম। সেখানে একজন তত্ত্বাবধায়ক, ২৫ জন চিকিৎসকসহ মোট ৫৮ জন কর্মরত আছেন, যা মাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার উপযোগী জনবল।

নতুন বানানো ভবনের নিচতলায় কোভিড-১৯-এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চতুর্থ তলাটি অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলাটি করোনা রোগীদের আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে কয়েকটি শয্যা ফেলে রাখা হয়েছে। তবে কোনো রোগী নেই। বাকি তলাগুলো ফাঁকা। অথচ শয্যাসংকটের কারণে পুরোনো ভবনের ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের।

জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা একটু জটিল রোগ নিয়ে কোনো রোগী এলেই তাঁকে কোনো পরীক্ষা বা চিকিৎসা না দিয়েই পাঠিয়ে দেন সিলেট কিংবা ঢাকায়।

প্রশ্ন হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করার পর তা এভাবে ফেলে রাখার মানে কী? জনবলই-বা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না কেন? বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। তারা যদি জনগণের এই গুরুতর সমস্যা আমলে না নেয়, তাহলে সরকারের উন্নয়ন জনগণের গায়ে লাগবে না। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এই গাফিলতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

যেহেতু হাসপাতালের প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ না দেওয়ায় নতুন ভবনে কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না, সেহেতু দ্রুত এই লোকবল নিয়োগ করা হোক। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।