নাব্যতা হারাচ্ছে কীর্তনখোলা

ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল। সেই বরিশাল অঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী কীর্তনখোলা বর্জ্য-প্লাস্টিকে ভরাট হয়ে যাওয়ার খবরটি আমাদের একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত করে। তাহলে কি বাংলাদেশের কোনো নদী ঝুঁকি ও দূষণমুক্ত থাকবে না?

সমুদ্রের কাছে বলে কীর্তনখোলায় নিয়মিত জোয়ার–ভাটা হয়। জোয়ারের সময় নদীতে যে ময়লা–আবর্জনা জমে, ভাটিতে তা সমুদ্রে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু নদীর তলদেশে বর্জ্য ও প্লাস্টিকের আস্তরণ এতটাই পুরু যে ভাটার তোড়েও সেসব অপসারিত হয় না। এ কারণে কীর্তনখোলার গভীরতা অনেক কমে গেছে। অনেক সময় ভারী নৌযান আটকে যায়।

নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নিয়মিত খনন করে থাকে। কিন্তু পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তরণের কারণে সেই খননকাজ ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, গত ১৫ অক্টোবর থেকে কীর্তনখোলায় খননযন্ত্র বসিয়ে নদী খনন শুরু করা হলেও কাজ এগোচ্ছে ঢিমেতালে। একটি খননযন্ত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টা কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার বেশি কাজ চালানো সম্ভব হয় না।

গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যেসব বর্জ্য ও প্লাস্টিক উজান থেকে আসে, তার কিছু সাগরে ভেসে গেলেও বাকিটা নদীর তলদেশে জমতে থাকে। সেই সঙ্গে দুই তীরের বাসিন্দারা নদীতে হরহামেশা বর্জ্য, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী নদীতে ফেলে থাকেন। প্রথম আলোর বরিশাল প্রতিনিধি সরেজমিনে বরিশাল লঞ্চঘাট, নগরের ভাটারখাল, ডিসি ঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখেছেন, নদীর চরে বিপুল পরিমাণে পলিথিন, প্লাস্টিক ও অপচনশীল বর্জ্যের স্তূপ পড়ে আছে। জোয়ারের সময় এসব বর্জ্য নদীতে চলে যায়। এ ছাড়া নৌবন্দরে আসা যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পলিথিন ও পানির বোতল, প্লাস্টিকের সামগ্রী নদীতে ফেলেন।

দক্ষিণাঞ্চলের নৌপরিবহনের জন্য কীর্তনখোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী। এ ছাড়া এই নদীতে আছে প্রচুর মৎস্য সম্পদ। এ রকম একটি নদী পলিথিন ও প্লাস্টিকে ভরাট হয়ে যাবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। অনতিবিলম্বে কীর্তনখোলায় পলিথিন-প্লাস্টিকসহ সব ধরনের বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। নদীদূষণ রোধে যে আইন আছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কেবল খনন করে নদীকে বাঁচানো যাবে না। নদী যাতে ভরাট না হয়, কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে এবং নদীদূষণকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।

বর্জ্য-পলিথিন-প্লাস্টিক থেকে কীর্তনখোলাকে রক্ষা করুন।