নারী উদ্যোক্তাদের হুমকি

প্রতারক ও অপরাধী চক্র করোনাকালে ইদানীং নারী উদ্যোক্তাদের টার্গেট করেছে। সারা দেশেই তারা নারী উদ্যোক্তাদের কাছে প্রধানত ফোনের মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ হাতিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে। আশঙ্কা করা যায়, মোবাইল ফোনের এমন অপব্যবহার শুরুতেই প্রতিহত না করলে তা একটা ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার এটা একটা উদ্বেগজনক নতুন উপদ্রব। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপর্যায় থেকে এই বিষয়ে এখনই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা দরকার।

মিরপুরের কেশোয়ারা সুলতানা হঠাৎ কথিত সন্ত্রাসী শাহাদতের ফোন পান। রাজশাহী উইমেন চেম্বারের সভাপতি মনিরা মতিন বিকাশের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ১৪ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বা মেলায় দোকান দিয়েছিলেন, এমন অনেক নারী হুমকি বা প্রতারক চক্রের কবলে পড়েছেন।

নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বাজারজাতকরণে এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিবছর মেলার আয়োজন করে। মেলায় প্রকাশিত স্যুভেনিরে ২০১২ সাল থেকেই নারীদের নাম, ঠিকানা ও ছবি রয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ফোনে প্রতারণার একটা বিষয় সংগঠনটি লক্ষ করেছিল। কিন্তু তা এতটা গুরুতর ছিল না। এটা অনুমেয় যে এই স্যুভেনিরের সূত্রেই সন্ত্রাসী ও প্রতারকেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী উদ্যোক্তাদের ফোন করছে। এ পর্যন্ত যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে দেখা যায়, সবাই এসএমই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ধরেই নিতে হবে, সন্ত্রাসী ও প্রতারক চক্র যদি এই ফোনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ে একবার কোনোভাবে সুবিধা করতে পারে, তাহলে তারা সংগঠিত হবে এবং তাদের নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত করবে। যেহেতু এটা এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোনকেন্দ্রিক, তাই দক্ষতার সঙ্গে ফোন ট্র্যাক করাটাই উপযুক্ত কৌশল। এভাবে অপরাধীদের খুঁজে বের করে যদি তার দ্রুত বিচার এবং রায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা সম্ভব হয়, তাহলে অপরাধীরা নিবৃত্ত হতে পারে।

উদ্যোক্তাদের সতর্ক করে ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি ছেপেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তাদের উচিত হবে অবিলম্বে সাংগঠনিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে সম্ভব সব রকম পদক্ষেপ নেওয়া। তাদের উচিত হবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে ফোনের তালিকা সরবরাহ করা। এবং ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা। ফোন ট্র্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিরও দায়দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিটি কোম্পানিরই ফোন অপব্যবহারের অভিযোগ রেকর্ড করা এবং প্রতিকার দেওয়ার রীতি রয়েছে। কিন্তু সেটা অনেক ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব এবং সময়সাপেক্ষ।

নারীরা ক্রমবর্ধমান হারে নানাভাবে সাইবার অপরাধের শিকার। আমরা আশা করব, নারী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আসা অভিযোগগুলোর বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানিগুলো সংবেদনশীল হবে এবং যথাযথ প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেবে।