নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

সম্পাদকীয়

গত রোববার ভোরে পদ্মা সেতু সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার পর লাখ লাখ মানুষের যাত্রা যে অনেক স্বস্তিদায়ক ও সময়সাশ্রয়ী হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বরিশাল থেকে এক দিন আগে যে যাত্রী ফেরি পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন ৯ ঘণ্টায়, সোমবার তিনি পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে গেছেন মাত্র ৩ ঘণ্টায়। কেবল বরিশাল নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের জন্য এ সুবিধা এনে দিয়েছে পদ্মা সেতু।

এই আনন্দসংবাদের সঙ্গে যে বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো সেতুর নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা। শনিবার দুপুরে লাখ লাখ হর্ষোৎফুল্ল মানুষের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। সেদিন জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া না হলেও শত শত কৌতূহলী মানুষ হঠাৎ করেই সেতুর ওপর উঠে পড়েন; যাঁদের নিবৃত্ত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

রোববার ভোরে জনসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও আগের রাত থেকে দুই প্রান্তে হাজার হাজার যানবাহন অপেক্ষা করছিল, যেগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যাই সর্বাধিক। ফলে টোল প্লাজার গেট খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি, বাস, ট্রাক মোটরসাইকেলের আরোহীরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েন। সেতুর ওপর যাত্রীদের নামা বারণ থাকা সত্ত্বেও অনেকে সেখানে নেমে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন।

এরই মধ্যে দুই যুবকের সেতুর রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে যাঁদের একজন ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিআইডির দাবি, পদ্মা সেতুর নাট খালি হাতে খোলা সম্ভব নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁরা কীভাবে খুলেছেন? তাঁরা কি নাট খোলার যন্ত্রপাতি নিয়ে সেতুতে উঠেছিলেন? তঁারা নির্বিঘ্নে এই কাজ করতে পারলেন কীভাবে? নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কেন তাৎক্ষণিকভাবে তঁাদের নিবৃত্ত করতে পারলেন না?

পদ্মা সেতুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সঙ্গে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। কিন্তু এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছেই থেকে যাচ্ছে। সেতু বিভাগ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই সেনাবাহিনী সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।

প্রথম দিনের বিশৃঙ্খলাকে জনসাধারণের উচ্ছ্বাস ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরে নিলেও নিয়ম অনুযায়ী পদ্মা সেতুর ওপর যানবাহন থামিয়ে নামা, ছবি তোলা বা ভিডিও করার সুযোগ নেই। কোনো নিয়ম বা আইন থাকলে তা ভঙ্গ করার জন্য শাস্তির বিধান থাকতে হবে। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেল, নিয়ম বা আইন সঠিকভাবে কার্যকর করা যায়নি। এ সুযোগে পদ্মা সেতুর ওপর প্রস্রাব করার মতো অরুচিকর
ঘটনাও ঘটেছে। মোটরসাইকেলের অসম্ভব চাপের কারণে পদ্মা সেতুর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত সেতু বিভাগ অনির্দিষ্টকালের জন্য সেতুর ওপর মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।

পদ্মা সেতু দেখার আগ্রহ থেকে হয়তো অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুর দুই প্রান্তে ভিড় জমিয়েছিলেন, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে জরুরি প্রয়োজনে মোটরসাইকেলের যাতায়াতকারীরাও বিপাকে পড়েছেন।

কারণ, ফেরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেতু ছাড়া তাঁদের পারাপারের আর কোনো পথ নেই। আমরা আশা করব, এ নিষেধাজ্ঞা খুবই সাময়িক হবে এবং আইন মেনে সব বাহনই যাতে পদ্মা সেতুর ওপর চলাচল করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে।

আমরা আশা করব, পদ্মা সেতু নিয়ে শুরুর দিকের এই উচ্ছ্বাস–আবেগ সামলে সেতু কর্তৃপক্ষ এর যথাযথ নিরাপত্তা ও নিরাপদ যান চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কোনো ত্রুটি করবে না।