নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ জরুরি

সম্পাদকীয়

জমকালো শহরে অন্ধকার বস্তিজীবন—আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাই বুঝি এটি। এক পাশে জীবনের অঢেল প্রাচুর্য কিংবা আনন্দের সমাহার, অন্য পাশে দারিদ্র্য কিংবা জীবনযুদ্ধের বাস্তবতা। একটি রাজধানী শহরের বাসিন্দা হিসেবে ঢাকাবাসী কতটা নিশ্চিত নাগরিক সুবিধা ভোগ করে, সেটি নিয়ে অবশ্যই সন্দেহ আছে। কিন্তু উন্নত আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের তুলনায় বস্তিবাসীদের জন্য সেটি আরও বেশি পার্থক্য জুড়ে দেয়।

যেন এক শহরের দুই ধরনের নাগরিক। ময়লা আর নোংরা পরিবেশে জীবনধারণ করাই যেন বস্তিবাসীদের নিয়তি। টেকসই ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবের কারণে মানুষের জীবনযাপন কতটা কঠিন হয়ে পড়ে, সেটিই দেখিয়ে দেয় ঢাকার বস্তিগুলো। এমন পরিস্থিতিতেই বাস করছেন ঢাকার পাঁচ হাজারের বেশি বস্তিতে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে এই মানুষেরা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।

রাজধানীর প্রেসক্লাবে গত বৃহস্পতিবার আয়োজিত এ–সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ), ইনসাইটস ও দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র (ডিএসকে)। সেখানে উঠে এসেছে কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে ক্যানসার, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, টাইফয়েডের মতো বিপজ্জনক রোগ থেকে শুরু করে সাধারণ সবই রোগেই আক্রান্ত হচ্ছেন বস্তির মানুষ।

নোংরা পরিবেশের কারণে প্রায় ৩৪ শতাংশ বস্তিবাসী এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। ময়লা পানির কারণে ২৭ শতাংশ ও জলাবদ্ধতার কারণে ১৯ শতাংশ মানুষ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এবারও বস্তির মানুষ বেশি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ফলে বস্তিবাসীর চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের মধ্যে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অসহিষ্ণুতাও বাড়ছে। নোংরা পরিবেশের কারণে শিশু-কিশোরেরা শিক্ষা থেকে ঝরে যাচ্ছে। তরুণ-যুবকেরাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে অনাগ্রহী থাকে। তার মানে একটি অরক্ষিত, অনিরাপদ, অনিশ্চিত জীবনের দিকে একটি প্রজন্মকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বস্তির মানুষকে দূরে রেখে তাঁদের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারিভাবে বস্তিবাসীর জন্য আবাসন থাকা উচিত। বস্তির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

সেগুলো হলো আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বর্জ্যের কারণে জনস্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো নিরূপণ করে তা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া। বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নত করতে এসব সুপারিশ আমলে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করছি, সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি নিয়ে মনোযোগী হবেন।