পবিত্র ঈদুল ফিতর

কোভিড–১৯ বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এল পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এই ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে; সারা বিশ্বের মুসলমান এটি পালন করেন খুশির উৎসব হিসেবে। কিন্তু পরপর দুই বছর আমাদের এই উৎসবের আনন্দ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে চলমান মহামারির কারণে। এই মহামারিতে বিশ্বে এ পর্যন্ত মোট ৩৩ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। আর বাংলাদেশে মারা গেছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ; পরীক্ষার মাধ্যমে সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত মানুষের সংখ্যা পৌনে ৮ লাখ পেরিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগমনে ঘরে ঘরে আনন্দ না হোক, আশা ও প্রত্যয় জাগুক যে আমরা সবাই মিলে এই দুর্যোগ ও দুঃসময় পেরিয়ে আবার সুস্থ, স্বাভাবিক, কর্মচঞ্চল জীবনে ফিরে যাব।

এ বছর পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগেই করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার ফলে এবারও লকডাউন বা ‘বিধিনিষেধ’ আরোপ করা হয়েছে। এই কঠোর অবস্থানের মধ্যেই এক মাস ধরে রোজা রেখে ইন্দ্রিয়ের কৃচ্ছ৶সাধনা চলেছে। পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনার লক্ষ্য দৈহিক ও আত্মিক সংযমের অনুশীলন। এবারের লকডাউন যেহেতু আগেরবারের তুলনায় বেশ শিথিল এবং ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন এবং যাচ্ছেন, সেহেতু প্রত্যেককেই ব্যক্তিগতভাবে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এটা এখন বিশেষভাবে প্রয়োজন; কারণ, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, যার সংক্রমণ ক্ষমতা অন্য ধরনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এই ধরনের ব্যাপক বিস্তারের ফলে ভারতের মহামারি পরিস্থিতি এখন বেশ উদ্বেগজনক। সেখানে কুম্ভমেলা এবং কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন ইত্যাদি উপলক্ষে ব্যাপক জনসমাগমের ফলে সংক্রমণের এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশেও ঈদুল ফিতরের আগে–পরের এই সময়ে একই রকমের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাই এই সময়ে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সামান্যতম শিথিলতা আমাদের সবার জন্য অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এবারও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে মসজিদে মসজিদে। নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গিয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, কোলাকুলি–করমর্দন ইত্যাদি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিটি মসজিদে ঈদের জামাত পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে এসব দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদগুলোর মাইকে এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রচার করা উচিত।

সংক্রমণের হার ঢাকায় বেশি এবং ঈদ উপলক্ষে যেহেতু প্রায় ২৮ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং আরও অনেকেই যাবেন, তাই এমন আশঙ্কা থাকছে যে উপসর্গহীন কিন্তু সংক্রমিত অনেক মানুষের সংস্পর্শে সারা দেশেই সংক্রমণের হার বাড়বে। তাই যাঁরা দেশের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন এবং যাবেন, তাঁদের সেখানে যাওয়ার পরেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

করোনাকালে ঈদের কেনাকাটায় সংযমী হতে হবে। বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষের জীবনে খাদ্যাভাব চলছে, এখন বিত্তবানদের কর্তব্য হলো দরিদ্র ও বিপন্ন মানুষের প্রতি সাহায্য–সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

সবাইকে ঈদ মোবারক।