পাউবোর ব্যাখ্যা কী

খালের এক পাশে সড়কের সংযোগ থাকলেও অন্য পাশে ফসলি জমি। তবু খালের ওপর ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। সেটি কোনো কাজে আসছে না। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশের চেলাখালের ওপর দুই বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি বানিয়েছিল। ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিন গুগলে ‘অপ্রয়োজনীয় সেতু’ শব্দবন্ধ লিখে অনুসন্ধান করলে এ ধরনের অসংখ্য সেতুর খবর পাওয়া যাবে। ‘জন্ম থেকেই পরিত্যক্ত’ এসব সেতু নির্মাণে যত টাকা ব্যয় হওয়ার তথ্য পাওয়া যাবে, তা ‘সরকারকা মাল দরিয়া মে ঢাল’ নীতিবিরোধী যে কাউকে স্তম্ভিত করবে। শুধু সেতু নয়, অপ্রয়োজনীয় বহু উন্নয়ন অবকাঠামো দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, একদিকে জনগণ এসব অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোর কানাকড়ি ফল না পেলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের প্রভূত উন্নতি হয়ে থাকে; অন্যদিকে বহু জায়গায় সড়ক কিংবা সেতুর অভাবে বছরের পর বছর সাধারণ মানুষ অশেষ ক্লেশ স্বীকার করে। কোথাও হয়তো বাঁধের অভাবে মানুষের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সরকারি সহায়তার জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভিটেবাড়ি হারাতে হয়। একপর্যায়ে মানুষ নিজেরাই অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নামে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা এমন ঘটনার সর্বশেষ দৃষ্টান্তস্থল। সেখানকার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নে তিস্তা নদীতীরবর্তী পাঁচটি গ্রামের প্রায় চার শ পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকাবাসী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) বাঁধ করে দিতে অনুরোধ করে আসছিলেন। কিন্তু পাউবো সময়ক্ষেপণ করেছে। যখন স্থানীয় বাসিন্দারা বুঝতে পেরেছেন পাউবোর সহায়তার অপেক্ষায় থাকলে আরও খেসারত দিতে হবে, তখন তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ শুরু করেন। প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ লাখ টাকা। স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে এ বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। পাশের গ্রামের বাসিন্দারাও নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়েছেন। হাটবাজার থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের প্রায় পৌনে তিন কিলোমিটার অংশে মাটি ও বালু ফেলা হয়েছে।

যেখানে কোটি কোটি টাকার ভুয়া প্রকল্প পাস হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, সেখানে এ জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বাঁধটি করে দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে আরজি জানানোর পরও কেন তা করা গেল না, সেটি একটি গুরুতর প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার।