এ বছর এপ্রিলের শুরুতেই প্রকৃতি অস্বাভাবিক আচরণ করছে বলে আবহাওয়াবিদদের অভিমত। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। ষড়্ঋতুর দেশে অনেক ঋতুর উপস্থিতিই টের পাওয়া যায় না। উজানে বৃষ্টি হওয়ায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। কালবৈশাখীর ছোবলে বেশ কয়েকটি জেলায় ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্যদিকে গ্রীষ্মের গরমও বাড়ছে অস্বাভাবিক মাত্রায়।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বৈশাখের প্রথম দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচলে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দেশের ভেতর সিলেটেও বৃষ্টি হয়েছে। সারিঘাট ও গোয়াইনঘাট নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশের ৩৯টি নদ-নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছে, ৩৩টির পানি বেড়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও মৌলভীবাজারের প্রায় সব নদীর পানিও বাড়ছে।
এ অবস্থায় হাওর এলাকায় আকস্মিক অকালবন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বন্যার পানি প্রথম আঘাত হানে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। এ কারণে সেখানকার বাঁধগুলো ঝুঁকিতে আছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধে ফাটল ধরেছে। টাঙ্গুয়া এলাকায় বোরোর আবাদ কম। ফলে সেখানে পানি উঠলেও ক্ষতি কম। কিন্তু অন্যান্য এলাকার বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাওর এলাকায় যে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ধান উৎপন্ন হয়, তার সিংহভাগই ঝুঁকিতে আছে। এ ঝুঁকি কমানোর উপায় হলো বন্যা আসার আগেই পাকা ধান কেটে ফেলা। কৃষি বিভাগ বলেছে, যেসব খেতের ধান ৮০ শতাংশ পেকেছে, কৃষকেরা যেন তা কেটে ফেলেন। কেননা হঠাৎ পানি বেড়ে গেলে ধান কাটা যাবে না। যেসব খেতের ধান এখনো পাকেনি, সেগুলা রক্ষা করতে হলে বাঁধের ফাটলগুলো দ্রুত মেরামত করতে হবে। আশা করব, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করবে। অনেক সময় লোকবলের স্বল্পতার দোহাই দেওয়া হয়। এ সময় যেসব এলাকায় বন্যার আশঙ্কা নেই, সেখান থেকে তারা লোকবল সরিয়ে এনে হাওর এলাকায় নিয়োগ করতে পারে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষ সব সময়ই উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে থাকে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন নিষ্ক্রিয় থাকে, তখনো তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়ও তারা নিজ উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজে মানুষের সহায়তা নিতে পারে।
প্রতিবছরই বন্যা, ঘূর্ণিঝড় হয়। আমরা হয়তো এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে পারব না। কিন্তু আগেভাগে ব্যবস্থা নিলে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া যায়। যেখানে অভিন্ন নদী আছে, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে এককভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সে ক্ষেত্রে যৌথ নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। আমাদের অনেক নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে শুকনো মৌসুমে যেমন সেগুলো শুকিয়ে খরখরা, তেমনি বর্ষা মৌসুমে নদীগুলো পানি ধারণ করতে পারে না বলে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যা হয়। তাই এর স্থায়ী প্রতিকার হিসেবে নদীর নাব্যতাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ খাতে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
দেরিতে হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঘুম ভাঙুক।