পানিসংকটে খুলনা

খুলনা নগরীতে মানুষ থাকে ১৫ লাখ, প্রতিদিন তাদের পানি লাগে ২৪ কোটি লিটার। এই পানির চাহিদা সিটি করপোরেশন বা ওয়াসারই মেটানোর কথা। কিন্তু তারা মাত্র অর্ধেক মানুষের পানি সরবরাহ করে। সেই পানিও আবার লোনা। বাকি অর্ধেকের ব্যবস্থা খুলনাবাসী নিজেরাই করে। মাটির নিচ থেকে পানি তুলেই সাধারণত চাহিদাটা মেটায় তারা। শুরুতে সাধারণ মোটরেই কাজটা করা যেত। তারপর আস্তে আস্তে নামতে থাকে পানি। গত বছরও এই সময়ে খুলনার বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর ২৮ থেকে ৩১ ফুটের মধ্যে ছিল। এই বছর সেই স্তর কোথাও কোথাও ৩৫ থেকে ৩৭ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে।

পানি ২৬ ফুটের নিচে চলে গেলেই হাতে চালানো নলকূপে আর পানি তোলা যায় না। আর ৩০ ফুটের নিচে চলে গেলে বাসাবাড়ির মোটরও আর পানির নাগাল পায় না। ফলে নগরের অধিকাংশ নলকূপই এখন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সমস্যার টেকসই সমাধানে না গিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে সাবমারসিবল। বলা যায় খুলনা নগরীর খাওয়ার পানির প্রধান উৎস এখন সাবমারসিবল।

গণহারে সাবমারসিবল ব্যবহার করে প্রতিদিন মাটির নিচের পানির স্তরকে আরও খালি করে ফেলছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টিহীনতা। গত ৬ মাসে খুলনায় বৃষ্টি হয়েছে মোটে ২৬ মিলিমিটার। এত কম বৃষ্টিপাত গত ২০ বছরে খুলনায় আর হয়নি। ফলে শূন্য পানির স্তরও আর ভরাট হচ্ছে না। এসব কারণে খুলনায় প্রতিবছরই ৬-৭ ইঞ্চি করে নেমে যাচ্ছে পানি। আশঙ্কা হচ্ছে বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরও নামবে। আর তেমন কিছু হলে খুলনা নগরের ৮০-৯০ শতাংশ নলকূপই অকেজো হয়ে পড়বে। সেটা হবে এক মহা বিপর্যয়। অন্যদিকে যত গভীরে যাওয়া হচ্ছে, তত আরও লোনা হচ্ছে পানি।

এই সমস্যার একটা সমাধান হতে পারত নদীর সুপেয় পানি পরিশোধন করে ব্যবহার। এ উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয় খুলনা ওয়াসা। তার আওতায় ২০১৯-এর অক্টোবর থেকে ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন করে মধুমতি নদীর পানি রূপসার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে আনছে। সেই পানিই শোধন করে খুলনা নগরে সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু দুই বছরও পেরোতে পারেনি, লবণাক্ততার কারণে পানের অযোগ্য হয়ে উঠেছে সেই পানি। এই দিকটা না ভেবে এত ব্যয়বহুল একটা প্রকল্প তাহলে নেওয়া হলো কেন? তার চেয়ে বড় কথা খুলনাবাসীর পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান তাহলে কী?